নগরে গত ২৮ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল রেকর্ড হয় ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ নয় দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। অবশ্য গত সাত দিন ধরে (৩০ ডিসেম্বর থেকে গতকাল ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। দুয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে নগরে বেড়েছে উত্তর এবং উত্তর পশ্চিম দিক আসা ঠাণ্ডা বাতাসের তীব্রতা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত পড়া মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা। ফলে বাড়ছে শীতের অনুভূতিও। কনকনে ঠাণ্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে জনজীবন। বিশেষ করে ভাসমান লোকজন ও পথশিশুদের পাশাপাশি দিন মজুর বা খেটে-খাওয়া লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে। নগরের ছিন্নমূল লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, শীতের হাত থেতে বাঁচতে তারা বিভিন্ন খড়কুটো জ্বালিয়ে রাত জাগছেন। গত সোমবার রাতে চট্টগ্রাম পুরাতন রেলস্টেশন এলাকা পরির্দশনে খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণ হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরের মুরাদপুর এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক আবদুল হকের সঙ্গে। তিনি জানান, স্ত্রী ও সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবার তার। থাকেন ষোলশহর এলাকায়। পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে সাত-সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। অন্য সময়ে সকালে সূর্যের তেজ বাড়ার আগে রিকশা চালিয়ে স্বস্তি পেতেন। কিন্তু শীত বাড়ায় কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসের জন্য সকালে রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। সকালে রাস্তায় অফিসগামী লোকের উপস্থিতি থাকে বেশি। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
আরেক রিকশা চালক মোজাম্মেল বলেন, শীতের জন্য সকালে দেরিতে বের হই। আবার সন্ধ্যার আগে ফিরে যাই। ফলে কয়েক ঘণ্টা রিকশা কম চালাতে পারছি। এতে আয়-রোজগারও কমে গেছে।
অবশ্য শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয় বেড়েছে শীতের কাপড় ব্যবসায়ীদের। মার্কেট থেকে ফুটপাত সবখানে জমে উঠেছে শীতের বাজার। এতে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। তারা বলছেন, এবার শীতের তীব্রতা দেরিতে অনুভূতি হওয়ায় মৌসুমের শুরুতে শীতের কাপড়চোপড়ের প্রতি আগ্রহ কম ছিল সাধারণ মানুষের। এতে হতাশ ছিলেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে বেড়েছে বিকিকিনি।
কমছে তাপমাত্রা : আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার নগরে সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আগের দিন ৪ জানুয়ারিও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে ২৯ ডিসেম্বর ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর এবং ১ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া ৩ জানুয়ারি ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২ জানুয়ারি রেকর্ড হয় ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় আজ শুক্রবার আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া উত্তর অথবা উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
শৈত্য প্রবাহ : আবহাওয়া অধিদপ্তরের মাসব্যাপি পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি (৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনও কখনও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে বলেও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। সমুদ্রের কারণে আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ থাকে। তবে প্রাকৃতিকভাবে বেশি শীত নেমে এলে তখন শৈত্যপ্রবাহ হতেও পারে। এছাড়া দুয়েক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা আরো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।