জুয়ায় আসক্ত রিদুয়ানের অনেক লোন। পরিশোধ করতে পারছে না। পাশে এসে দাঁড়ালেন আত্মীয় আমিনুল ইসলাম। রিদুয়ানকে বললেন, আমার একটি বাচ্চা দরকার। ম্যানেজ করতে পারলে তুমি টাকা পাবে। রিদুয়ান তখন জানালেন, ঠিক আছে, দেখি। যেই কথা সেই কাজ। রিদুয়ান প্রতিবেশীর ৫ মাসের বাচ্চাকে অপহরণ করে আমিনুলের হাতে তুলে দিলেন। বিনিময়ে রিদুয়ানের হাতে আমিনুল তুলে দিলেন ১ লাখ টাকা।
গত সোমবার দুপুরের দিকে জেলার বাঁশখালীতে শিশু অপহরণের এ ঘটনা ঘটে। ঘরের উঠানে ছোট্ট শিশু আদিয়াতকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন বাবা মঞ্জুর আলম। সেখানে রিদুয়ান এসে তাকে কোলে নিতে চাইলে বাবা তাতে না করেননি। সরল বিশ্বাসে শিশুকে রিদুয়ানের কোলে দেন। এরপর তিনি বাড়ির পাশে থাকা নিজের চা দোকানে চলে যান। এর আগে তিনি রিদুয়ানকে বলে যান যে, যাওয়ার আগে যেন আদিয়াতকে তার মায়ের কাছে দিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রিদুয়ান সেটি করেন নি। তিনি অটোরিকশায় তুলে আদিয়াতকে অপহরণ করে বসেন। ঘণ্টা দু’য়েক পর মঞ্জুর আলম বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে শিশু আদিয়াতের খোঁজ করেন। তখন স্ত্রী তাকে জানান যে, রিদুয়ান তার শিশু সন্তানকে বাড়িতে দিয়ে যায় নি। শিশু সন্তান এভাবে হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতবম্ব হয়ে পড়েন তারা। কোন কুলকিনারা খুঁজে না পেয়ে তারা বাঁশখালী থানায় ছুটে যান। একপর্যায়ে বাঁশখালী থানায় গিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৭/৩০ ধারায় অপহরণের অভিযোগে মঞ্জুর আলম বাদী একটি মামলা দায়ের করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাবের একটি টিম তদন্ত শুরু করেন। র্যাব তথ্য পায় যে, শিশু আদিয়াত জেলার আরেক উপজেলা চন্দনাইশে রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে অপহরণের পরদিন মঙ্গলবার সকালে চন্দনাইশ থানাধীন আমিনুলের বোন রোবাইদা সুলতানার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আদিয়াতকে উদ্ধার করা হয়। একই দিন সন্ধ্যায় নগরীর চকবাজার থানাধীন দেবপাহাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আমিনুলকে। আমিনুলই এ অপহরণের পরিকল্পনাকারী, বলছে র্যাব।
র্যাব জানায়, আমিনুলের বোন রোবাইদার একটি বাচ্চা দরকার। এ কথা তিনি তার কাজিন তথা আত্মীয় রিদুয়ানকে জানান। বিনিময়ে টাকা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। জুয়ায় আসক্ত হয়ে ইতিমধ্যে রিদুয়ানের অনেক লোন হয়েছে। বাচ্চা অপহরণ করলে টাকা পাবে, আর সেই টাকা দিয়ে লোন শোধ করবে এমন চিন্তা থেকে আমিনুলের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন রিদুয়ান। আমিনুলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও রিদুয়ানকে এখনো খুঁজে পায়নি র্যাব। তাকে ধরতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
১ লাখ ২০ হাজার টাকায় দেন দরবার হলেও রিদুয়ানকে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয় জানিয়ে র্যাবের সূত্র জানায়, অটোরিকশা করে শিশু আদিয়াতকে নিয়ে যেতে দেখেছিল পাড়ার লোকজন। কিন্তু তাকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। র্যাব জানায়, চন্দনাইশে বোনের বাসায় শিশু আদিয়াতকে দিয়ে এসে আমিনুল গ্রেপ্তার এড়াতে নগরীর দেব পাহাড়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকেই তিনি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের আমিনুল পটিয়ার বরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা। র্যাব–৭ এর এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার পরবর্তী আমিনুলকে বাঁশখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা থানা পুলিশ করবে।