প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করুন! জেনে রাখুন, তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ঈমানের মূলভিত্তি। ইসলামের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব পৃথিবীর বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহ তা’আলা বিশ্ব মানবতার সর্বোত্তম আদর্শ তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “তিনি (আল্লাহ) তাঁর রাসূলকে হেদায়ত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন। যাতে অন্য সকল ধর্মের উপর এ ধর্মকে বিজয়ী করেন যদিও এতে অংশীবাদীরা অসন্তুষ্ট হয়। (সূরা: সাফফ, আয়াত: ৯)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন একমাত্র তারই দাসত্ব ও বন্দেগী করার জন্য। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “আর নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে আর দেব–দেবীর পূজা অর্চনা হতে বিরত থাকে। (সূরা: নাহল–৩৬)
ইহুদীরা একত্ববাদে বিশ্বাসী নয়: ইহুদী ও খ্রিষ্টান এ দুটি দুষ্ট জাতি আল্লাহর জন্য পুত্র সন্তান সাব্যস্ত করে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণতি হয়েছে, “এবং ইহুদীরা বলে যে ওজায়ের আলাইহি সালাম আল্লাহর পুত্র এবং খ্রিস্টানরা বলে যে মসীহ আল্লাহর পুত্র, এটা তাদের মুখ নিঃসৃত বাণী, তারা পূর্ব বর্তী কাফিরদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের বিনাশ করুন। তারা কোথায় ফিরে যাবে। (সূরা: তাওবা, আয়াত: ৩০)
ইহুদীরা আল্লাহর কিতাব বিকৃত করেছে, ইহুদীরা আসমানী কিতাব তাওরাত শরীফ তাদের ইচ্ছে অনুসারে পরিবর্তন করেছে তাওরাতের অবিকৃতরূপ পৃথিবীর কোথাও নেই, এ কিতাবে তারা পরিবর্তন পরিবর্ধন সংযোজন, বিয়োজন ও বিকৃতিকরে করে অভিশপ্ত ও কলংকিত জাতিতে পরিণত হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “তারা (ইহুদীরা) যথাস্থান হতে তাওরাতের বাক্যাবলী পরিবর্তন করেছে এবং তা যে বিষয়ে বিবৃত হয়েছিল তার একাংশ ভুলে গেছে। (সূরা: মায়েদা আয়াত: ১৩)
ইহুদী খৃষ্টানরা মুসলমানদের চিরশত্রু: গোমরাহীর অতল গহবরে নিমজ্জিত ইহুদীদের হেদায়তের জন্য আল্লাহ তা’আলা একে একে অসংখ্য নবী প্রেরণ করেন। আল্লাহর কিতাবের বিকৃতি ও গোমরাহী তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বেপরোয়া করে তোলে এমনকি তারা আল্লাহ তা’আলার অসংখ্য নবীদের প্রতি ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন, নবীদের প্রতি অত্যাচার জুলুম নির্যাতন করতেও বিন্দুমাত্র সংকোচ করেনি। পূত:পবিত্র চরিত্রের অধিকারী আল্লাহর অসংখ্য নবীদেরকে তারা হত্যা করেছে ইহুদীদের এহেন অপরাধ প্রবণতার কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেন তাদের অপকর্মের কারনে যুগে যুগে তারা লাঞ্ছিত হয়। খৃষ্টপূর্ব ৫৬১ সালে ব্যাবিলনের শাষক বখত নসর জেরুজালেম আক্রমণ করে শহরটিকে লন্ডভণ্ড করে এবং ৭০ হাজার ইহুদীকে বন্দী করে শান্তি প্রদান করে। ইহুদীরা অর্থ লোভী। অর্থ উপার্জনে তারা হারাম হালাল ন্যায় অন্যায় কোন পার্থক্য করেনা। আক্রমণ, আগ্রাসন এবং অপরের সম্পদ শোষন করার কাজে তারা সিদ্ধ হস্ত। চক্রান্ত ষড়যন্ত্র তাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। দুনিয়ার সর্বত্র এক বিশ্বাসঘাতক জাতি হিসেবে তাদের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। নানাবিধ অপকর্মের কারণে গোটা পৃথিবীর দুইশ কোটি মুসলমানের কাছে তারা ঘৃণিত ও ধিকৃত অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। ইহুদীরা ছিল যাযাবর জাতি, মার্কিনী ও বৃটেনের সহায়তায় আজ দুনিয়া জুড়ে তাদের অবৈধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। ১২৯০ সানে ইংল্যান্ড থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা হয়। ১৫১০ খ্রি. রাশিয়া থেকে ইহুদী জাতি বিতাড়িত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ইহুদীদের পাইকারীভাবে হত্যা করেন। এভাবে হত্যা লাঞ্চনা নির্বাসন আক্রমণ আগ্রাসন ইত্যাদি অভিশপ্ত কাহিনীতে ভরপুর তাদের ঘৃণ্যতম ইতিহাস। তারা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু, বিশ্ব সভ্যতার শান্তি সমৃদ্ধি ও আদর্শের শত্রু। আল্লাহ তা’আলা তাদের ব্যাপারে মু’মিনদেরকে সতর্ক করেছেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা। তারাই পরস্পর বন্ধু, তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু বানাবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা: মায়িদা, আয়াত: ৫১)
বদর যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় ইহুদীদের সহ্য হলোনা: বদর যুদ্ধ ছিল কাফিরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ, এ যুদ্ধ মুসলমানদের ৩১৩ জনের ক্ষুদ্র কাফেলা আবু জেহেলের নেতৃত্বে সংস্রাধিকার বিশাল বাহিনীর মোকাবিলায় মুসলিম বাহিনীর ঐতিহাসিক বিজয় ও সাফল্য ইহুদী জাতির সহ্য হলোনা। তারা যুদ্ধ চলাকালীন মদীনায় বসে রাসূলুল্লাহর শাহাদাতের মিথ্যা খবর রটিয়ে দিয়েছিল বনী নজীর গোত্রের সরদার কাব বিন আশরাফ মুসলমানদের বিজয়ের সংবাদ বরদাশত করতে না পেরে মক্কায় চলে যায় এবং পুনরায় মদীনায় আক্রমণ করার জন্য কুরাইশদের উস্কানি দিয়ে প্ররোচিত করার কাজে লিপ্ত হয়। তৃতীয় হিজরির রবিউল আউয়াল মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশক্রমে তাকে হত্যা করা হয়।
ইহুদী ষড়যন্ত্রে তুর্কী খিলাফত উচ্ছেদ হলো: তুর্কী খিলাফত মুসলিম জাহানের ঐক্য সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কেন্দ্র বিন্দু ছিল। সমগ্র মুসলিম জাহান এ খিলাফত ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে পারস্পরিক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। ইংরেজ ও ইহুদীদের বহুমূখী ষড়যন্ত্রের ফলে খিলাফত উচ্ছেদ হয়ে গেলে মুসলিম জাহানের ঐক্য সূত্র ছিন্ন হয়ে পড়লো এরপর থেকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাত ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ভাবর্মূতি ক্ষুন্ন করে খৃষ্টান ও ইহুদী চক্রান্তে নিমজ্জিত হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করেছে।
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে মুসলিম রাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা: গোটা বিশ্বে ইহুদীদের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজন বিদিত। মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও রাসূলুল্লাহর সুন্নাহর মধ্যে তাদেরকে অভিশপ্ত ও লাঞ্চিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “ আপনি মুমিনদের জন্য মানুষের মাঝে সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবেন ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।” (সূরা: মাবিয়া, ৮২)
বর্ণিত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদি ও পৌত্তলিকরা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু। রাসূলুল্লাহর হাদীসের বর্ণনা মতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধিতায় পৃথিবীর সকল কুফরী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, অচিরেই জাতি সমূহ তোমাদেরকে ধ্বংসের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে যেভাবে পিপাসার্ত খাদ্য গ্রহণকারীরা খাবারের দস্তর খানের প্রতি উদগ্রীব হয়ে পড়ে, একজন জিজ্ঞেস করলেন, সেদিন মুসলমানদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এমন হবে? নবীজি বললেন তোমরা বরং সেদিন সংখ্যায় অধিক হবে কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে “ওয়াহন” ঢেলে দেবেন এক ব্যক্তি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ ওয়াহন কী? নবীজি বললেন দুনিয়ার প্রতি অধিক ভালোবাসা ও মৃত্যের ভয়। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস, ৪২৯৭, মুসনাদে আহমদ হাদীস ২২৪৫৩)
আজকের দুনিয়ার পার্থিব স্বার্থে মুসলমানরা মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা না রেখে ইহুদী রাষ্ট্র, ইসরাইল ও মার্কিনীদের তাবেদার হয়ে আছে। ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কারো অজানা নয়। অন্যদিকে মুসলিম রাষ্ট্র ইয়েমেন, কাতার, মিশর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডানসহ আশে পাশের মুসলিম অধ্যূষিত দেশগুলোর সাথে বৈরীতা, আরব রাষ্ট্রগুলো আজকে ফিলিস্তিনের পক্ষে দাড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছেনা। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক বিরোধ ও অনৈক্য ইহুদীদেরকে শক্তিশালী করেছে। অথচ বর্তমান বিশ্বে ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকের সংখ্যা দেড় কোটির বেশী নয়। তবুও তারা বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে আছে পক্ষান্তরে বর্তমান বিশ্বের মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় দুইশত কোটি।
হযরত ওমর (রা.) ’র আমলে ৬৩৬ খ্রি. ফিলিস্তিন মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনের মুসলমানরাই ফিলিস্তিন ভূখন্ডের আসল মালিক। অথচ বায়তুল মুকাদ্দাস ও জেরুজালেম মসজিদুল আকসায় মুসলমানরা আজ নিষিদ্ধ যা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য লজ্জাজনক ও দুর্ভাগ্যজনক, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর এই ক্রান্তিকালে ইহুদী অপশক্তির বিরুদ্ধে সকল মুসলিম রাষ্ট্র ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে। মজলুম ফিলিস্তিনবাসীর বিজয় একদিন আসবেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা তাওফিক দান করুন।
লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসা–এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রি), বন্দর, চট্টগ্রাম; খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।
মুহাম্মদ কায়কোবাদ
কমল মুন্সির হাট, চক্রশালা, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: পৃথিবীর কোন দেশে কোন মযহাবের অনুসারীর সংখ্যা অধিক পরিমাণ রয়েছে জানালে কৃতার্থ হব।
উত্তর: যে সব রাষ্ট্রের অধিবাসী হানাফী মাযহাব অনুসারী তা–হল: ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, আলবেনিয়া, কসোভা, বসনিয়া, হারজোগোবিনা, বলকান, মিশর, স্পেন, কানাডা, জর্ডান, লেবানন, ইরাক, রাশিয়া, ককেশাস, চীন, উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশ।
মালিকী মাযহাব: উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েত।
শাফেয়ী মাযহাব: মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রনেই, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, ইয়ামেন, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারত।
হাম্বলী মাযহাব: সৌদি আরব। (সূত্র: ইনফরমেশন অব দ্যা মুসলিম ওয়াল্ড কৃত: এম এইচ সোহেল, পৃ: ৮)