একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই মানুষ বড় হয়, প্রতিষ্ঠিত হয়। জ্ঞানার্জনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে লেখাপড়া। মনে রাখতে হবে, লেখার মানুষটি যদি জ্ঞানী না হয়, তাহলে দামি কলম দিয়েও ভাল লেখা বের হবে না। তাই লেখা আর বলার আসল শক্তি হলো জ্ঞান।
তিনি গতকাল সকালে আনোয়ারার বরুমচড়া শহীদ বশরুজ্জমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তন উদ্বোধন ও বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছিলেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এম এ মালেক বলেন, জীবনের শুরু থেকে লক্ষ্য স্থির করতে হবে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে। পড়তে হবে। আর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জীবনে অসম্ভব বলে কিছু নেই। নেগেটিভিটিকে মনে স্থান দেওয়া যাবে না। সব সময় পজিটিভ চিন্তা নিয়ে সামনের দিকে এগুতে হবে। চেষ্টা থাকলে আজ না হয় কাল কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবেই। তিনি পৃথিবীতে তিনজন মানুষকে কখনো অসম্মান করা যাবে না বলে মন্তব্য করে বলেন, এই তিনজনের একজন মা, দ্বিতীয় জন বাবা এবং তৃতীয় জন হলেন শিক্ষক। যে তিনজন মানুষ সবসময়ই চান, তার সন্তান, তার ছাত্র তার থেকে বেশি সফল হোক।
তিনি বিমান আবিষ্কারের গল্প শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, ওইদিন রাইট ব্রাদার্সরা যদি ওভাবে ঝাঁপ না দিতেন তাহলে আজ আমরা চল্লিশ হাজার ফুট উপর দিয়ে এক হাজার কিলোমিটার বেগে উড়তে পারতাম না। কাউকে না কাউকে শুরু করতে হবে। তারা শুরু করেছিলেন বলেই পৃথিবী আজ তার সুফল ভোগ করছে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টা করতে হবে। সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে এম এ মালেক বলেন, সময় কখনো বসে থাকে না। আজকের এই সুন্দর সময়টা আগামী কাল আর পাওয়া যাবে না। তাই সময়ের কাজ সময়েই শেষ করতে হবে। আজকের পড়াটা আগামীকালের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। সময়কে অবহেলা করে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও জাফর–আয়শা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আশরাফ সিকদারের ব্যক্তিগত অনুদানে শিক্ষকদের অফিস, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে এম এ মালেক বলেন, আমার বিশ্বাস আপনাদের সভাপতি আশরাফ সিকদারের হাত ধরে এই বিদ্যালয় এলাকার শিক্ষা বিস্তারে বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে। তিনি বিদ্যালয়ের পাঠাগারের জন্য দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে বই উপহার প্রদানেরও ঘোষণা দেন।
বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও জাফর–আয়শা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আশরাফ সিকদারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার। প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম সরকারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক ড. শামসুদ্দীন শিশির। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক আজাদীর চীফ রিপোর্টার হাসান আকবর, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন, এডহক কমিটির অভিভাবক সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুহাম্মদ সালাউদ্দীন সুমন, শিক্ষক প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সাবেক অভিভাবক সদস্য এম. নুরুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পিংকু পালিত, প্রধান শিক্ষক আবুল মনছুর, আনোয়ারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) সদস্য সচিব আতিকুর রহমান, শিক্ষক মঈনুল ইসলাম ও শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন মুন্না প্রমুখ।
প্রধান বক্তা ড.শামসুদ্দীন শিশির বলেন, আমি ২৮ বছর শিক্ষকতা জীবনে কোনদিন চেয়ারে বসে ক্লাস নিইনি। চেয়ারে বসে শিক্ষকতা করিনি। তাই শিক্ষকদের প্রতি আমার অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো ভালোবেসে শিক্ষা দিন, একদিন তারাই সমাজ আলোকিত করবে। তিনি গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে নিজেদের উজাড় করে দেয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। বলেন, পুঁজি ছাড়া যেমন ব্যবসা হয় না তেমনি পড়া ছাড়া শিক্ষাকতা হয় না। আমাদের দুর্বলতা থাকতে পারে কিন্তু আমাদের লজ্জ্বাবোধ ছেড়ে পারস্পরিক সম্মানবোধ রেখে পড়ার অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদেরকে আগামী পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
দৈনিক আজাদীর চীফ রিপোর্টার হাসান আকবর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, একটা জাতির মূল পরিচয় হচ্ছে শিক্ষা। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সেই জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষাই আমাদের মূল সম্পদ। এই সম্পদ অর্জন এবং ব্যবহারের উপরই জাতির ভবিষ্যত নির্ভর করে। তিনি শিক্ষক–শিক্ষার্থীসহ সকলের মাঝে আত্মসম্মানবোধ এবং নীতি নৈতিকতার চর্চা করার আহ্বান জানান।
ইংরেজি ভাষা শেখার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত অধ্যয়নের পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষাটা বেশি করে রপ্ত করতে হবে। শুধুমাত্র ভাল ইংরেজি জানলেই আজকের অর্ধেক বিশ্ব জয় করা সম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন। হাসান আকবর মা–বাবাকে সম্মান এবং ভালোবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মা–বাবাকে কষ্ট দিয়ে এই পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত একজন মানুষেরও সফল হওয়ার নজির নেই।
সভাপতির বক্তব্যে আশরাফ সিকদার বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গত ৬ মাসে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে জাফর – আয়েশা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শিক্ষকদের জন্য আধুনিক মিলনায়তন করে দিয়েছেন। সেই সাথে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন ভবনসহ, আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার যাবতীয় সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করে আগামী বছরের মাঝামাঝি জাতীয় মানের একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। যেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া গণমানুষের জন্য পাঠাগারটি উন্মুক্ত থাকবে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের কাজ শুধু লেখাপড়া। অন্যকিছুতে জড়াবে না। লেখাপড়ার জন্য যে কোনো সমস্যা আমাকে বলবে। ডাক্তারি পড়ো, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ো, যতদূর পড়তে চাও আমি পাশে থাকবো। তোমার বাবার সঙ্গতি না থাকলে আমাকে গোপনে বলিও, আমি সবকিছুই করবো।
এর আগে প্রধান অতিথি, উদ্বোধক ও অতিথিরা বিদ্যালয়ের নব নির্মিত অফিস ভবন ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের স্কাউট টিম ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে অতিথিদের উষ্ণ অভিবাদন জানায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।












