প্রতিবেশি দেশ ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট। অন্যদিকে শ্মশান-কবরস্থানগুলোতে মরদেহের দীর্ঘ সারি। ভারতের রাজধানী দিল্লী, উত্তর প্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র যেন মৃত্যুপুরী। ভারতের মতো পরিণতি যাতে আমাদের ভোগ করতে না হয়, সেজন্য এখন আরো বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না। ভারতের অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। তার ওপর সরকার লকডাউনের মধ্যে শপিংমল-মার্কেট খুলে দিয়েছে। টাকা দিয়ে আমরা যেন মৃত্যু না কিনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা ব্যবসা পরিচালনা করছেন। জীবন-জীবিকা একে অন্যের পরিপূরক। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভারতের পরিস্থিতি তো আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। সেখানে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এছাড়া মৃত্যুর মিছিলও বাড়ছে। আমাদের সরকার ব্যবসায়ীদের জীবিকার কথা মাথায় রেখে মার্কেট-শপিংমল খুলে দিয়েছে। এখন মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি দোকান মালিক সমিতিকে ভাবতে হবে। একটি দোকানে একসাথে যেন হুড়োহুড়ি করে প্রবেশ না করে। ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে দুইটি মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া প্রতিটি দোকানে স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। উন্নত বিশ্বে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা তাদের দৈনন্দিন কাজ করছেন। আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত ধোয়া অথবা স্যানিটাইজ করার বিকল্প নেই। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা সেটি অবশ্য প্রশাসনকে নজরদারি করতে হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত বছর করোনার কথা বিবেচনায় রেখে ব্যবসায়ীরা নিজ থেকে মার্কেট-শপিংমল বন্ধ রাখে। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেক ব্যবসায়ী এবার লোন করে মার্কেটে বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া গত বছর লকডাউন শুরু হয় রমজানের তিন মাস আগে। এ বছর করোনা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি হওয়ায় ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ পড়ে। আমরা জীবন ও জীবিকা দুটোই বাঁচাতে চাই। জীবন না বাঁচলে জীবিকার বিষয় আসছে না। আবার জীবিকা না থাকলে ব্যবসায়ীদের না খেয়ে মরতে হবে। গত বছরের ক্ষতি ব্যবসায়ীরা এখনো পুষিয়ে নিতে পারেনি। আমরা সরকারের কাছ থেকে ভ্যাট ট্যাঙ মওকুফ পাচ্ছি না। সময় হলে ভ্যাট ট্যাঙের জন্য কর কর্মকর্তারা আমাদের চাপ দেন। আবার আমাদের ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা কিংবা সরকারি কোনো সহায়তাও পায়নি। আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে বলেছি সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন তারা ব্যবসা পরিচালনা করেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ যখন ক্রমাগত বাড়ছে, সরকার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষনা করলেও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গত ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেবার অনুমতি প্রদান করেন। ব্যবসায়ীরা মাস্ক পড়া, স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শপিংমল খোলা ও দোকানপাট চালু করলেও প্রথমদিনই তাদের সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন নেই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের জীবিকা বাঁচানোর ‘রমজানে একমাস ব্যবসা করবো, পুরো বছর বসে থাকবো-এ স্লোগানকে সফল করতে ক্রেতারা যদি হুমড়ি খেয়ে ঈদের বাজার করতে শপিংমল ও দোকানে ভিড় করেন তাহলে আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য মৃত্যু কিনে আনার মতো বিষয় হবে।’ প্রতিবেশি দেশ ভারতে করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অঙিজেনের জন্য পুরো ভারত জুড়ে হাহাকার চলছে এবং একই সাথে চলছে মৃত্যুর মিছিল। যেহেতু করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে এবং এটি অদৃশ্য শত্রু। তাই করোনা রোগী শনাক্ত ও চিহ্নিত করাটাও কঠিন। করোনায় জীবিকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক পরিবার চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ যোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলির অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের জানা আছে। হাসপাতালে বেড ছিল না। চিকিৎসা ছিল না, ওষুধ ছিল না এবং শ্বাস নেয়ার অঙিজেন ছিল না। মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। করোনায় মারা যাওয়া অনেকের ঠিকমতো জানাজা হয়নি। নাগরিক হিসাবে করোনা থেকে নিজ ও পরিবারের সদস্যদেরকে বাঁচাতে নিজের সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিজেকে নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছি।