নগরের কাজীর দেউড়িস্থ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সংলগ্ন শিশু পার্কের স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর এ সুপারিশ করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা এবং সুধীজনরা শিশু পার্কটির জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ করার দাবি করেছিলেন। ২০১৬ সালে একবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ১৫ বছরের জন্য ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লি.’ নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানকে শিশু পার্কটি ইজারা দেয় চসিক। এর আগে ১৯৯২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ বছরের জন্যও একই প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এই ইজারা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষে ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’র সঙ্গে ইজারা চুক্তি নবায়ন করে চসিক।
মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্ব্বর সকাল সোয়া ৯টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তাই এটা আবেগ ও গৌরবগাঁথা স্থান। কিন্তু বিএনপি সরকার এই স্মৃতিমাখা স্থানটি পরবর্তী প্রজন্মের মন থেকে মুছে ফেলার হীনমানসে বিনোদন কেন্দ্র তথা শিশুপার্ক করেছিল বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে গতকাল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ প্রসঙ্গে সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘সার্কিট হাউসের সামনের যে জায়গাটিতে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেখানে জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক করা হয়েছে। আমরা সেখানে আত্মসমর্পণের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের সুপারিশ করেছি। আমরা বলেছি, সেখানে যে কক্ষটিকে জিয়াউর রহমাকে হত্যা করা হয়েছে, সেটা সংরক্ষিত থাকবে, কিন্তু শিশু পার্কের স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ হবে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ আজাদীকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সুপারিশ সেটা প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম থেকে। অথচ চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতি সৌধ নেই। এটা ভাবাই যায় না। আমরা মন্ত্রীকে এ বিষয়ে অনুরোধ করেছিলাম। এখন সরকার যদি মনে করে শিশুপার্কের জায়গা স্মৃতি সৌধ গড়ার তাহলে নিশ্চয়ই ভাল হবে। মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রামে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এদিকে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাকির হোসেন রোডস্থ পাহাড়তলী বধ্যভূমির শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন মেয়র আ.জ.ম নাছির শিশু পার্কের জায়গায় স্মৃতি সৌধ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, এদিকে শিশু পার্কটি যে ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে তার মূল মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের এঙিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ নুরুল আবছার স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে নিজেদের জমি ফেরত চায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সভায় তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জেলা প্রশাসককে পার্কটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ গত ৯ মে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিশু পার্কটির বর্তমান ইজারা বাতিলের অনুরোধ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমদকে পৃথক দুটি আধা সরকারি পত্র দেন। এতে নওফেল দাবি করেন, ‘ইজারা চুক্তি সরকারের পূর্বানুমোদনক্রম ব্যতিরেকে করা হয়, যা সিটি কর্পোরেশন আইন-২০০৯ এর সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।’