জিম্মি ৪ নারী সেনাকে ছাড়ল হামাস, বিনিময়ে ২০০ ফিলিস্তিনির মুক্তি

গাজা যুদ্ধ শুরুর পর আরও ১৫ হাজার যোদ্ধা যুক্ত করেছে হামাস

| রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় জিম্মি ৪ নারী সেনাকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস। গতকাল শনিবার ইসরায়েলের ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এদিন স্থানীয় সময় ১১টার দিকে গাজার প্যালেস্টাইন স্কয়ারে ইসরায়েলি ৪ নারী জিম্মিকে নিয়ে আসা হয়। রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তরের আগে সেখানে এক মঞ্চেও তোলা হয় তাদের। এ সময় তাদের বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। মঞ্চে তাদের পাশে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র যোদ্ধাদেরও দেখা গেছে। পরে হামাস ও রেড ক্রসের মধ্যে কাগজপত্র স্বাক্ষর হওয়ার পর রেড ক্রসের গাড়ি ওই জিম্মিদের নিয়ে ইসরায়েলের পথে রওনা হয়। এই জিম্মি মুক্তির আগে হামাস গতকাল ছাড়া পেতে যাওয়া ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দির নামপরিচয়ও প্রকাশ করে। এদের মধ্যে ৬৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি আছে ১৫ বছর বয়সীও। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল হামাস যে ৪ নারী সেনাকে ছেড়ে দিয়েছে, তারা হলেনকারিনা আরিয়েভ, ডেনিয়েলা গিলবোয়া, নামা লেভি ও লিলি অ্যালবাগ। তাদেরকে ইসরায়েলগাজা সীমান্তের এক সামরিক ঘাঁটি থেকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর তুলে নিয়েছিল হামাস। সেদিনের হামলার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে। তাদের সাঁড়াশি হামলায় ১৫ মাসে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় এ মাসে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে প্রথম তিন নারী জিম্মিকে ছাড়ে হামাস।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ছয় সপ্তাহব্যাপী প্রথম ধাপে হামাস মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। এর মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার করা হবে এবং গাজায় মানবিক সাহায্য ঢুকবে। প্রথম ধাপ চলাকালেই দ্বিতীয় পর্যায়ের শর্ত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা শুরু হওয়ার কথা।

আরও ১৫ হাজার যোদ্ধা যুক্ত : যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ১০ থেকে ১৫ হাজার যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছে। এই গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে জ্ঞাত মার্কিন কংগ্রেসের দুই কর্মকর্তা এমনটি জানিয়েছেন বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

ওই কর্মকর্তারা জানান, গাজা যুদ্ধে প্রায় সমসংখ্যক হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ এই সরকারি হিসাব এর আগে প্রকাশ করা হয়নি।

১৫ মাস ধরে যুদ্ধ চলার পর হামাস ও ইসরায়েল গত রোববার থেকে একটি যুদ্ধবিরতি শুরু করেছে। এ যুদ্ধে গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আর ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের আগুনে মধ্যপ্রাচ্যও উত্তপ্ত হয়েছে। ওই মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, হামাস সফলভাবে নতুন সদস্য সংগ্রহ করলেও তাদের অনেকেই অল্প বয়সী ও প্রশিক্ষণহীন। এদের মূলত সাধারণ পাহারার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ১৪ জানুয়ারি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস হামাস ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে যত যোদ্ধা হারিয়েছে প্রায় ততজন সদস্য সংগ্রহ করেছে। এটি ‘স্থায়ী বিদ্রোহ ও চিরস্থায়ী যুদ্ধের’ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

তবে হামাস কতোজন যোদ্ধাকে হারিয়েছে আর কতোজনকে নতুন করে যুক্ত করেছে, এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো হিসাব প্রকাশ করেননি তিনি। কিন্তু ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধে হামাসের প্রায় ২০ হাজার যোদ্ধ নিহত হয়েছেন। ব্লিঙ্কেন বলেছেন, প্রত্যেকবার ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান সম্পন্ন করে ফিরে আসার পর হামাসের জঙ্গিরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে আবির্ভূত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়েই হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে ১৫ মাস ধরে গাজায় টানা নির্বিচার হামলা চালিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে তারা তেমনটি করতে পারেনি। হামাস দেখিয়েছে, গাজায় তাদের শেকড় অনেক গভীর।

যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার হামাস পরিচালিত প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফের আরোপ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ছিটমহলটির বিভিন্ন অংশে প্রাথমিক পরিষেবাগুলো পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে, যেগুলোর অনেক কিছুই ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসায় ৫০ কোটি টাকা থাকার খবরে হানা
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালী উপকূলে অস্ত্রসহ ১২ জলদস্যু আটক