জি কে শামীমের বিরুদ্ধে নতুন করে জালিয়াতির মামলা

জাল ডকুমেন্টে চবিতে ৭৫ কোটি টাকার কাজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে এক বছর আগে গ্রেপ্তার হওয়া জি কে শামীমের (গোলাম কিবরিয়া শামীম) বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে নতুন করে জালিয়াতির মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে গতকাল রোববার দুপুরে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন। শামীম গণপূর্তের আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মামলায় তিনি ছাড়াও আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরীকেও আসামি করা হয়েছে। জাল ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ কোটি টাকার কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪০৯, ১০৯ ধারা উল্লেখ করা হয়। মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও মূল্যায়ন কমিটির কাউকে আসামি না করায় মামলাটি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে মামলায় সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বাদী হলেও মামলার এজাহার সম্পর্কে জ্ঞাত নন বলে দাবি করেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন। ক্রয় সংক্রান্ত মূল্যায়ন কমিটির কাউকে মামলায় আসামি না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, আলোচিত জি কে শামীমসহ আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা দরপত্রের সাথে উপস্থাপিত ডকুমেন্ট জাল-জালিয়াতি করে কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন। তবে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাউকে আসামি করা না করার বিষয়টি আমি জানি না। আমাকে জেনে বলতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, মামলার বাদী অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অনুসন্ধানে পাওয়া ফলাফল সম্পর্কে কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে পদায়িত উপ-পরিচালককে অবগত করেন। অনুসন্ধান প্রতিবেদন সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়েই উপ-পরিচালকের সত্যায়নের পর প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে মামলার এজাহারের একটি ড্রাফট (খসড়া) কপিও প্রধান কার্যালয়ে পাঠাতে হয়। এখানেও উপ-পরিচালক বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত থাকেন। প্রধান কার্যালয়ে মামলার অনুমোদন পাওয়ার পর মামলাটি রেকর্ড হয় মাত্র।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ একাডেমিক ভবনের (২য় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ) ২য় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে। ১ম নিম্ন দরদাতা হিসেবে জি কে বিল্ডার্স ও দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৫ কোটি ১ লক্ষ ২৯৫ টাকার কাজটির কার্যাদেশ পায়। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কার্য সম্পাদন চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ অভিযোগটি অনুসন্ধান করে। অনুসন্ধানে দুদক কর্মকর্তারা জানতে পারেন, চবি কর্তৃক আহ্বান করা দরপত্রের শর্ত পূরণ করার মতো নির্মাণ কাজের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাজটি ভাগিয়ে নেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে বিদেশি মদসহ শামীমকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পাশাপাশি তার অফিস থেকে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। তাকে গ্রেপ্তারের পর গণপূর্তের কাজ ভাগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে আরো ৩৮ মৃত্যু নতুন আক্রান্ত ২০৬০
পরবর্তী নিবন্ধএবার নির্মাণ প্রকৌশলীকে পেটালেন বদি!