জাহাজের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যা বলছে বন্দর কর্তৃপক্ষ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বক্তব্য প্রদান করেছে। এতে বলা হয় যে, দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানির প্রায় ৯৩ শতাংশ পরিবাহিত হয়। আধুনিক বিশ্বের আমদানি রপ্তানির যে নতুন ধারা অর্থাৎ কন্টেনার হ্যান্ডলিং বিবেচনায় নিলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ৯৯ শতাংশ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তার সর্বোচ্চ সুযোগসুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানিকারকদের সেবা দিয়ে আসছে। প্রতিবছর দেশের আমদানি রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি হয় তার প্রায় ৯৩ শতাংশই এই বন্দরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে ২০২৪২৫ অর্থবছরে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি কন্টেনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। গত ১০ বছর যাবত চট্টগ্রাম বন্দরের গড় প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের মূল রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প গত কয়েক বছরে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বর্তমানে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করছে। এই রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। এই ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির জন্য যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করা হয় তাও চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বছরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। বিশাল এই ব্যবসায়িক সিস্টেমকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু নিজস্ব নিয়মনীতি, পদ্ধতি অনুসরণ করে। এরই ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর পূর্বের তুলনায় অধিক পরিমাণে পণ্য, কন্টেনার এবং জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হয়।

বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে সকল কন্টেনার জাহাজ পরিচালিত হয় তার বেশির ভাগই ফিডার জাহাজ। অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাঙ ইত্যাদি বন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করে। সুষ্ঠুভাবে বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্যকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এই ক্ষেত্রে মাসে আনুমানিক ১০০টি জাহাজ চলাচলের ফ্যাসিলিটি গড়ে তুলতে পেরেছে। এই জাহাজগুলো তাদের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার এবং কোনো টেকনিক্যাল ক্রুটি না থাকলে বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করতে পারে। গত ২০২৪২৫ অর্থবছরে ৩.২৯ মিলিয়ন বা ৩২ লাখ ৯০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। জাহাজ সমূহের অব্যবহৃত ক্যাপাসিটি সঠিকভাবে ব্যবহার, ত্রুটিমুক্ত জাহাজ চলাচল, স্বল্পতম সময়ে জাহাজের কার্যক্রম সম্পাদন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সুবিধা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের সংখ্যা নির্ধারণ করে থাকে। ফিডার অপারেটরসহ অন্যান্য সকল বন্দর ব্যবহারকারীগণও এই ব্যবস্থার সুফল ভোগ করেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে বলা হয়, গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুদ্ধাবস্থার কারণে শিপিং রুটে পরিবর্তন এবং নানাভাবে বিঘ্ন ঘটেছে। দেশে বিভিন্ন ধরনের ধর্মঘট, কলম বিরতি, কর্ম বিরতিসহ নানা কারনে ফিডার অপারেটরগণ নির্দিষ্ট পরিমাণ জাহাজ ব্যবহার করে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিলেন। দেশের আমদানিরপ্তানিকারিকগণকে সহযোগিতা প্রদান, ফিডার অপারেটরদের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ফিডার অপারেটরদের পারস্পরিক সম্মতিতে কন্টেনার জাহাজের সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে এডহক ভিত্তিতে ১২৬টি করা হয়। এতে সাময়িকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক ধারণক্ষমতার উপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়। জাহাজের বহির্নোঙরে অপেক্ষমান সময় বেড়ে যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে অতিরিক্ত কন্টেনার জড়ো হয়। তাছাড়া এডহক ভিত্তিতে চলাচলের অনুমতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জাহাজগুলো তাদের সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। এতে আমদানির রপ্তানিকারকগণের সাময়িকভাবে কিছুটা অসুবিধা হলেও দেশের বৃহত্তম স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ফিডার অপারেটরগণ পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বক্তব্যে আরো উল্লেখ করে যে, এডহক ভিত্তিতে যে জাহাজগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল সেগুলোকে ২/৩টি করে ভয়েজ অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শিপিং রুটে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন বা বিঘ্ন ঘটার মতো পরিস্থিতি না থাকায় এডহক ভিত্তিতে কয়েক মাস ধরে চলার জন্য যে কয়েকটি নতুন জাহাজকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল তার যৌক্তিকতা নির্ধারণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে উভয় পক্ষের আলোচনায় জাহাজের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় ১৫টি কমিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সৌহার্দ্যপূর্ণ এই আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এককভাবে জাহাজের সংখ্যা না কমিয়ে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনকে ওই দায়িত্ব প্রদান করে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজের সংখ্যা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি তালিকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতোমধ্যে ২০ জুলাই তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন হতে এডহক ভিত্তিতে অনুমতিপ্রাপ্ত জাহাজের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে দেশের আমদানি রপ্তানিকারকদের যথাযথ সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ২০ জুলাই তারিখের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি খুব সহসাই তাদের কাজ শুরু করবে এবং সার্বিক বিষয়ের বিবেচনায় নিয়ে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হবে বলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধু মানেই নতুন দিগন্ত
পরবর্তী নিবন্ধচুক্তি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করা হবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা