পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হাইকোর্ট একটি দুর্নীতির মামলায় দুই সপ্তাহের জামিন দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ইমরান খানকে আল–কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের একটি বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে ইমরান খানের এই জামিনের আবেদনের শুনানি হয়।
বিবিসি জানায়, শুনানির ফাঁকে ইমরান খান যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তিনি সব কিছুর জন্য সরাসরি সেনাপ্রধানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যা কিছু ঘটছে, তার জন্য একজনই দায়ী, তিনি হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। এরআগে ইমরান খানকে তার জামিনের শুনানির জন্য গতকাল শুক্রবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ইসলামাবাদের হাইকোর্টে হাজির করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার তার গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে সহিংস বিক্ষোভে এ পর্যন্ত অন্তত দশজন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বৃহস্পতিবার এক রায়ে ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তবে ইমরান খানকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য গতকাল শুক্রবার জামিনের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করার আগে পর্যন্ত পুলিশের পাহারায় রাখতে বলা হয়েছিল। ইমরান খানকে আদালতে হাজির করা হয় কড়া নিরাপত্তায় এক বিরাট গাড়ি বহরের সঙ্গে। ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে মোতায়েন রাখা হয়েছিল অনেক পুলিশ এবং আধা–সামরিক বাহিনীর সদস্য।
কালো চশমা এবং আকাশ–নীল রঙের সালওয়ার–কামিজ পরা ইমরান খান যখন হেঁটে আদালত ভবনে ঢোকেন তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবীরা। তাদের ঘিরে রেখেছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ পার্টির সদস্যরা আদালত ভবনের বাইরে জড়ো হয়ে শ্লোগান দেয়। ইমরান খানকে তখন তার সমর্থকদের দিকে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলতে দেখা যায়। গত বছরের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচনের দাবি তুলে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তিনি সরকার এবং পাকিস্তানের খুবই ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রাখেন এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করেন।
গত বছরের নভেম্বরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নেওয়ার সময় ইমরান খানের প্রাণনাশের চেষ্টার সময় তার পায়ে গুলি লাগে, সেই ঘটনার জন্যও তিনি উচ্চপদস্থ সরকারি এবং সেনা কর্মকর্তাদের দায়ী করেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে। পাকিস্তানে বিরোধী রাজনীতিকদের প্রায়শই এধরনের মামলার মুখে পড়তে হয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, সেদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে সরকার আদালতকে ব্যবহার করে। ইমরান খানের দল পিটিআই তাদের সমর্থকদের রাস্তায় নামার ডাক দেওয়ার পর ইসলামাবাদের পুলিশ জরুরি আদেশ বলে সব ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইমরান খান যখন ২০১৮ সালে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন তখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক ছিল। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, সেনাবাহিনী সাহায্য নিয়েই তিনি সেবার বিজয়ী হন। কিন্তু চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটা পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়ন তৈরি হয়। গত কয়েক মাসের ঘটনায় বোঝা যায়, তাদের সম্পর্ক এখন কতটা বৈরি হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইমরান খান হয়ে ওঠেন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কঠোর সমালোচক। পাকিস্তানের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সংযম প্রদর্শন এবং আইনের শাসন বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছে।