জামিন নাকচ, ফখরুল কারাগারে

প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার পুলিশ হত্যার আসামি ফখরুল, খসরুসহ ১৬৪ জন বিএনপির নেতাদের বাসায় অভিযান

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম শফিউদ্দিন গতকাল রোববার রাত ১০টায় বিএনপি মহাসচিবের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর এই আদেশ দেন।

ফখরুলের পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা খান, মহসিন মিয়া, ওমর ফারুক ফারুকী, মোসলেহ উদ্দিন জসিমসহ কয়েকজন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু।

ফখরুলকে এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার কোনো আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ফখরুলের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আবেদন করেছিলেন। বিচারক এ বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল সকালে বিএনপির ডাকা হরতালের মধ্যে মির্জা ফখরুলকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সারা দিন তাকে রাখা হয় ডিবি কর্যালয়ে। সাংবাদিকরা সারা দিন সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন ফখরুলকে কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানার জন্য। সেই তথ্য মেলে সন্ধ্যার পর।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন রাত সাড়ে ৮টায় সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সংঘর্ষের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিএনপি মহাসচিবকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর কিছুক্ষণ আগে বিশেষ পুলিশ প্রহরায় একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয় ফখরুলকে। সেখানে তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানি শেষে জামিন নাকচ হয়ে গেলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে শনিবার সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ২০ শর্তে তাদের সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ। শনিবার দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে। দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডেল নেতা শামীম মোল্লার।

সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই রোববার সারা দেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার গুলশানের বাসায় যায় গোয়েন্দা পুলিশ।

ফখরুলকে আটকের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ওরা (পুলিশ) সকালে এল। ওই সময় আমরা চা খাচ্ছিলাম। এসে প্রথমে বলল যে, স্যার আপনার সাথে কথা বলব। কিছু কথাবার্তা বলে নিচে চলে গেল। বলল যে, স্যার আপনার সাথে কথা বলার জন্য আসছিলাম। যাওয়ার সময়ে তারা বাসায় ভেতরের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস (হার্ড ডিস্ক) এবং অ্যাপার্টমেন্টের নিচের সিসি ক্যামেরার ডিভাইস নিয়ে গেছে। আমার যতটুকু ধারণা, তারা নিচেই ছিল। ১০ মিনিট পরে আবার এল, স্যার আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। যা বলে প্রত্যেক বার, স্যার উপরের অর্ডার আছে।

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গতকাল রাতে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, শনিবারের সংঘাতের ঘটনায় ঢাকার ২১টি থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬৯৬ জনকে। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার পাশাপাশি পুলিশ হত্যা মামলাতেও আসামি করা হয়েছে মির্জা ফখরুলকে। পল্টন থানার ওই মামলায় বিএনপি মহাসচিবকে করা হয়েছে ১ নম্বর আসামি।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার নিজ কার্যালয়ে বলেন, পুলিশকে যারা হত্যা করেছে, যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা চালিয়েছে, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ি পুড়িয়েছে, পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসব ঘটনায় যত উচ্চ পর্যায়ের হোক আর যত নিম্ন পর্যায়ের হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

নেতাদের বাসায় অভিযান : ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশের পর শনিবার রাতেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গুলশানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় পুলিশ অভিযান চালায় বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার। বিএনপির এই দুই নেতা তখন বাসায় ছিলেন না। তবে আবদুল আউয়ালের ছোট ছেলে তাজওয়ার এম আউয়ালকে বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তার পরিবারের ভাষ্য।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, শাহজাহানপুরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসা, বনানীতে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায়, মোহাম্মদপুরে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় এবং গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেনের বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালান। কিন্তু তাদের কাউকে গোয়েন্দারা পাননি।

পুলিশ হত্যার আসামি ফখরুলসহ ১৬৪ জন : বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক হত্যার ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে পল্টন থানায় মামলাটি করেন গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের এসআই মাসুক মিয়া।

আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, নিপুণ রায়, আমিনুল হক, হাবিবুন নবী খান, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, এস এম জিলানী, শামসুজ্জামান দুদু, শামসুর রহমান, শিমুল বিশ্বাস, তাবিথ আউয়াল, রফিকুল ইসলাম মাহাতাব, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক, রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, কাজী রওনাকুল হক শ্রাবণসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০২, ৩৫৩, ৪২৭, ১০৯, ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে এ মামলায়। তবে এ মামলায় বিএনপি মহাসচিবকে এখনও গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি বলে জানিয়েছেন পল্টন থানার ওসি সালাহউদ্দীন মিয়া।

রমনা থানার ওসি আবুল হাসান জানান, সমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনায় তার থানায় একটি মামলা হয়েছে। আরেকটি মামলা হয়েছে পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে। এ দুই মামলায় মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়েছে। মামলা দুটিতে ফখরুল ছাড়াও ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহরতালে ঢাকায় বাসে আগুন ভাঙচুর, নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার রেলপথে ট্রায়াল রান পিছিয়ে ৭ নভেম্বর