জাবেদ, তার স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা

ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

ব্যবসায়ীকে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে নেন, এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তা হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম১ এ দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান, ব্যাংকটির সাবকে পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও আরামিট পিএলসির এজিএম মো. আব্দুল আজিজ, মডেল ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও আরামিট পিএলসির এও মো. মিছবাহুল আলম, মো. ইয়াছিনুর রহমান ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এঙিকিউটিভ মো. ইউসুফ চৌধুরী।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুই মামলার মধ্যে একটি মামলার এজহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক এইচএম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সরোয়ার আলমকে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ নেন। যা পরে হস্তান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়। এজাহারে বলা হয়, সরোয়ার আলম ২০১৯ সালের ১৩ জুন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ৫৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরীর জন্য আবেদন করলে তা অনুমোদন করা হয়। এরপর উক্ত ৫৫ কোটি টাকা এইচএম শিপ ব্রেকিং এর বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর, ঋণের কিস্তি পরিশোধ, কর্মচারীর বেতন পরিশোধ ও নগদে উত্তোলনপূর্বক বিদেশে পাচার করা হয়েছে।

এজাহারে আরো বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী মন্ত্রী থাকাকালে নিজে ইউসিবিএল ব্যাংকের মালিক ও সাবেক পরিচালক হয়ে তার স্ত্রী রুকমিলা জামানকে উক্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে রেখে ব্যাংকের গ্রাহক সরোয়ার আলমকে চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুষ বাবদ অর্থ আদায় করেন। আসামি সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমিলা জামান তাদের নামীয় প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ও কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ কামরুজামান এবং আব্দুল আজিজসহ অন্যান্য ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের কর্মচারীদের নামে ব্যাংক হিসাব খোলেন। পরবর্তীতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক থার্মেঙ নিট ইয়ার্ন লিমিটেডের কাছ থেকে ৫২ কোটি টাকা, আগ্রাবাদ শাখার গ্রাহক এইচএম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ৫৫ কোটি টাকা, জুবলী রোড শাখার গ্রাহক ওয়েল মার্ট’র কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা, মহাখালী শাখার গ্রাহক সাইফ পাওয়ারটেক ও ইইঞ্জিনিয়ারিং পিএলসির কাছ থেকে ৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ইউসিবিএল ফরেন এঙচেঞ্জ শাখার গ্রাহক আইকনএঙ সার্ভিস লিমিটেডের কাছ থেকে ৬০ কোটি টাকাসহ মোট ২১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা সাইফুজ্জামান চৌধুরী ঘুষ বাবদ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে এইচএম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করা হয়।

এদিকে অপর মামলাটির এজহারে বলা হয়, ইউসিবিএল ব্যাংকে ২০২১ সালে ২০ কোটি টাকা লোনের আবেদন করেন ওয়েল মার্ট লিমিটেডের ব্যবসায়ী সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। একপর্যায়ে তা অনুমোদন পরে বিতরণও করা হয়। পরবর্তীতে বিতরণকৃত টাকার মধ্যে ৫ কোটি টাকা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্মচারী আব্দুল আজিজের নামে থাকা ইউসিবিএল সদরঘাট শাখায় খোলা ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর ও উত্তোলন করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালতে জাবেদের দুই কর্মচারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রকল্পের ফাইল বাসায় নিয়ে যান উপদেষ্টা, অভিযোগ মেয়রের