জানুয়ারিতে রপ্তানি আয়ে ৪১% প্রবৃদ্ধি

| বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

মহামারীর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় থাকা বাংলাদেশ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা গতবছরের প্রথম মাসের তুলনায় ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার এ সুখবর দিয়েছে। ভালো প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আয় হয়েছে এ খাত থেকে।
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৪৩ কোটি ৬৭ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। এ বছর জানুয়ারিতে ৪০৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে এ মাসে। খবর বিডিনিউজের।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ইতিহাসে এটা এক মাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়। সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর; ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছিল। ২০২০ সালে দেশে মহামারী শুরুর পর লকডাউন আর বিশ্ব পরিস্থিতির চাপে রপ্তানি আয় নেমে গিয়েছিল তলানিতে। এ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানিতে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। আগস্টে এক মাসে ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। সেই অবস্থা সামলে গতবছরের সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছে দেশের রপ্তানি খাত।
জানুয়ারি শেষে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এই সাত মাসে ২ হাজার ৫৪৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের। রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে তার চেয়ে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি।
রপ্তানির ইতিবাচক ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল খাত ভালো ভূমিকা রেখেছে। তবে পিছিয়ে আছে পাট ও পাটজাত পণ্য। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ৫৩৭ কোটি ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা খাত থেকে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে বলে সরকার আশা করছে।
গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত সোমবার বাণিজ্য মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেন, মহামারীর মধ্যেও দেশের শিল্পোৎপাদন ও রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটা পূরণ করা সম্ভব হবে বলেই মনে হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে বার্ষিক রপ্তানি ৮০ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
এ বছর জানুয়ারি মাসে পোশাক খাত থেকে আয় হয়েছে ৪০৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, যা মাসের পুরো রপ্তানির ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ২ হাজার ৩৯৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের সাত মাসের আয়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। জানুয়ারি মাসে নিট ও উভেন- দুই ধরনের পণ্য রপ্তানিই বেড়েছে। সাত মাসে ১৩২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারের নিট পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তাতে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর এক হাজার ৭১ কোটি ডলারের উভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে এই সাত মাসে, তাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়াচ্ছে ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। রপ্তানি আয়ে সামগ্রিকভাবে উন্নতি হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে।
৬৯ কোটি ৫০ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে অর্থবছরের গত সাতমাসে; যাদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৩ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৭৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর অর্থ পাটপণ্য খাতে রপ্তানি আয় কমেছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৮৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে; ফলে এটিই এখন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিখাত। গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায় হোমটেঙটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ।
এবার জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৮ কোটি ২৭ লাখ ডলারের; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। রপ্তানিতে চামড়া খাতের অবস্থান এখন চতুর্থ। পাখির পালক ও মানব চুল (উইংস অ্যান্ড হিউম্যান হেয়ার) রপ্তানি ১০৬ শতাংশ বেড়েছে গতবছরের প্রথম সাত মাসের তুলনায়। এবার ৫ কোটি ৬৩ লাখ ডলার এসেছে অপ্রচলিত এই খাত থেকে। হেডগিয়ার ও টুপি রপ্তানিতেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬১ শতাংশ। এই খাত থেকে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
প্রকৌশলপণ্য রপ্তানি করে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার এসেছে, তাতে ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি হওয়া এসব প্রকৌশল পণ্যের মধ্যে রয়েছে আয়রন স্টিল, তামার তার, স্টেনলেস স্টিলপণ্য, ইলেক্ট্রনিঙ পণ্য ও বাইসাইকেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআচরণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে সাহায্য করি
পরবর্তী নিবন্ধঐতিহ্যের জলকদর খাল ধুঁকছে কেন