কোভিড জটিলতায় মারা গেলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ঢাকার শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। গত মাসে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। জাতীয় পার্টির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ৭ তারিখে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরে তাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেই সংক্রান্ত জটিলতা থেকে তিনি আর বেরোতে পারেননি। পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার বাদে এশা গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
সাবেক সংসদ সদস্য বাবলুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় তিনি জিয়াউদ্দিন বাবলুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতীয় পার্টি মহাসচিব বাবলুর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।
এক শোকবার্তায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গণমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ছাত্রজীবনেই তার অনুপম নেতৃত্ব প্রকাশ হয়েছিল। বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসুর জিএস। দলের মহাসচিবের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি।
১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া বাবলু দ্বিতীয় দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য বাবলু এইচ এম এরশাদের সরকারে উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র বাবলু বাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শতকের ৮০ এর দশকের শুরুতে ডাকসুর জিএস থাকা অবস্থায় সামরিক শাসক এরশাদের দলে যোগ দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। তাকে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের উপদেষ্টা করেছিলেন সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। এরপর বাবলুকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী করা হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবলু। পরে ২০১৪ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এরশাদের জীবদ্দশায় ২০১৪ থেকে দুই বছর জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন বাবলু। ২০২০ সালে আবার সেই দায়িত্বে ফিরেছিলেন তিনি।
কয়েক বছর আগেই জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের ভাগ্নি মেহেজাবুন্নেসা রহমান টুম্পাকে বিয়ে করেছিলেন বাবলু। তার প্রথম স্ত্রী অধ্যাপক ফরিদা আক্তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০০৫ সালে মারা যান। বাবলু-ফরিদা দম্পতির এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।