ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলবিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছেন। বৃষ্টির মধ্যে তিনি সেখানে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান একাত্তরে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি। প্রধান উপদেষ্টার পর তার নেতৃত্বাধীন উপেদষ্টা পরিষদের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাখা পরিদর্শক বইয়ে মন্তব্য লেখেন।
স্মৃতিসৌধ থেকে উপদেষ্টা পরিষদ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া ১৩ উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ইউনূস।
প্রবল গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার শপথ নেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই যাত্রায় তার সঙ্গী ১৬ জন উপদেষ্টা। তবে বৃহস্পতিবার ১৩ জন উপদেষ্টা শপথ নেন। অনুপস্থিত ছিলেন তিন জন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদেরকে শপথবাক্য পাঠ করান।
যারা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নাহিদ ইসলাম ও সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের চারজন নারী। তারা হলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা (উবিনীগ)-এর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন শপথ নিয়েছেন উপদেষ্টা হিসেবে।
লেখক, রাজনীতি–বিশ্লেষক ও কলামিস্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানও পেয়েছেন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব। শপথ নিয়েছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন এবং হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক নায়েবে আমীর ও সুন্নী দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আ ফ ম খালিদ হোসেন। অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক–ই–আজম বীর প্রতীক, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে বঙ্গভবনে আসতে পারেননি। শপথ নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেন সবাইকে; বলেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার হবে দেশের সবার সরকার। নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের ও নির্ভয়ে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।