অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো টানাপোড়েন নেই। তবে দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আপসহীন। গতকাল সোমবার সেনা সদরে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এমনটি জানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সীমান্তের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনো ছাড় দেবে না। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার, আরকান আর্মি, রাখাইন করিডোর, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম–উদ–দৌলা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। দুই কর্মকর্তাই বলেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামানের বক্তব্য নিয়ে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাপ্রধান যেকোনো সময় বা সময়ে সময়ে অফিসার বা সৈনিকদের সাথে কথা বলে থাকেন, দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এটি তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে আমরা কোনো সাংবাদিককে ডাকিনি, তিনি জাতির উদ্দেশে কোনো ভাষণ দেননি, আইএসপিআর সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্যের যে গুঞ্জন, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম–উদ–দৌলা বলেন, এ রকম আসলে কিছু হয়নি। বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনী ওতপ্রোতভাবে কাজ করছে। একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করছে। একটি পরিবারের মতো।
করিডোর, পাহাড় ও মিয়ানমার প্রসঙ্গ : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে মানবিক করিডর করার যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। কর্নেল শফিকুল জবাবে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ে একটি আত্মস্বীকৃত টেরোরিস্ট দল রয়েছে, যারা সংঘাতপূর্ণ কাজ করে থাকে। তাদেরকে নির্বাচনে যুক্ত করা সমীচীন নয় বলে মনে হয়।
চট্টগ্রামে কুকি চিনের পোশাক তৈরি হচ্ছে, পুলিশ ৩০ হাজার পোশাক উদ্ধার করেছে, এসব বিষয়েও প্রশ্ন আসেও সংবাদ সম্মেলনে। কর্নেল শফিকুল বলেন, কুকি চিন বম সম্প্রদায়ের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের টোটাল সংখ্যা হচ্ছে ১২ হাজার জন। এই ১২ হাজার জন কীভাবে ৩০ হাজার ইউনিফর্মের জন্য…।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম–উদ–দৌলা বলেন, এই সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ। কেএমএফের অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে। আমাদের সেনা সদস্য আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে তাদের দ্বারা। সেই প্রেক্ষাপটে এটা ভালো খবর নয়। এটা নিরাপত্তার সাথে জড়িত হওয়ায় আমলে নেওয়া হয়েছে, কাদের জন্য এটা তৈরি হচ্ছিল এবং এই ত্রিশ হাজার পোশাক তাদেরই কিনা সেটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিয়ানমার–বাংলাদেশ সীমান্ত পথে অস্ত্র আনা–নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম বলেন, বাংলাদেশ–মিয়ানমার বর্ডার একটি জটিল পরিস্থিতির মুখে আছে এখন। ওই জায়গায় মিয়ানমার সরকারের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। রাখাইন অলমোস্ট দখল হয়ে গেছে। ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ দখল হয়ে গেছে। আরাকান আর্মি একটা অথরাইজ সংগঠন নয়। এই জায়গায় না আছে সরকারের অস্তিত্ব সেভাবে, না আছে আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো একটা অবস্থা। এক্ষেত্রে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সীমান্ত অবস্থা যে কোনো সময়ের তুলনায় সংবেদনশীল।
তিনি বলেন, এ সময় আর্মড গ্রুপের মুভমেন্ট হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তার মানে এই নয় যে এটাকে আমরা স্বীকৃতি দেব বা দেখেও না দেখার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করব না। আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের রাখতে যৌথ অভিযানকালে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।