ঊনবিংশ ও বিংশ শতকের যুগ সন্ধিক্ষণে ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের ওপর নেমে আসা ঘোর তমসায় যে ক’জন অকুতোভয় সৈনিক যাত্রাপথ তৈরির সংগ্রামে এগিয়ে এসেছেন এবং বাংলার প্রত্যেক প্রান্তরে ঘুরে অবচেতন জাতিকে যারা নকীবের মতো জাগরণী বাণী শুনিয়েছেন, তাদের মধ্যে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫–১৯৫০) নিঃসন্দেহে একটি প্রোজ্বল নাম। ধর্মচর্চা, শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সমাজসেবার পরিমণ্ডলে তিনি অপরিসীম অবদান রেখে গেছেন। বাংলার মুসলমানদের মাঝে আত্মজাগরণের প্রেরণা ছড়িয়ে দেন এবং শিক্ষা–সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের অগ্রসর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন মুসলিম জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম দরদি রাহবার বা পথিকৃৎ।
মাওলানা ইসলামাবাদী ১৮৭৫ সালের ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বরমা–আড়ালিয়ারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সারাজীবন মুসলিম জাতির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে করতে তিনি ১৯৪৭ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর্থিকভাবেও তখন তিনি দৈন্যদশায় পতিত হন। অনেকটা নীরবে, অবহেলায়–অনাদরে ১৯৫০ সালের ২৪ অক্টোবর ৭৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। অসিয়ত অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম শহরের কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা ও নবাব ইয়াসিন খান মসজিদ চত্বরে তাকে দাফন করা হয়। তিনি কলকাতার হুগলী সিনিয়র মাদরাসায় ছয় বছর অধ্যয়ন করে সেখান থেকে ১৮৯৫ সালে এফএম ফাইনাল পরীক্ষা পাস করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে রেভিনিউ আইন অধ্যয়ন এবং মোক্তারি পরীক্ষা পাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় তার পাণ্ডিত্য ছিল (ছৈয়দ মোস্তফা জামাল সম্পাদিত, মাওলানা ইসলামাদী; ড. মুহাম্মদ এনামুল হক, মুসলিম বাংলা সাহিত্য )।
শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি রংপুর শহরের মুনশীপাড়া জুনিয়র মাদরাসায় হেড মৌলভী পদে যোগ দিয়ে ১৮৯৬–৯৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। এরপর রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর হারাগাছি সিনিয়র মাদরাসায় হেড মৌলভী পদে ১৮৯৮–১৯০০ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। মাদরাসাটি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি চট্টগ্রাম ফিরে এসে সেখানে মৌলভী আবদুল আজিজ প্রতিষ্ঠিত মুসলিম বোর্ডিংয়ে সুপারিন্টেনডেন্ট পদে ১৯০০ সালে ৬ মাস কাজ করেন। এরপর সীতাকুণ্ড সিনিয়র মাদরাসার প্রধান শিক্ষক পদে শিক্ষকতা করেন (ড. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ্, পূর্ব বঙ্গীয় রাজনীতিক উলামার জীবনী)। তিনি ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামের কদম মোবারকে আবাসিক মুসলিম এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ছোট–বড় মিলিয়ে ৪২টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য হলো কোরআনে স্বাধীনতার বাণী, কনস্টান্টিনোপল, ভারতের মুসলমান সভ্যতা, ভারতে ইসলাম প্রচার, সমাজ সংস্কার, মহামান্য তুরস্কের সুলতানের জীবনী, খাজা নেজামুদ্দীন আউলিয়া, মুসলমানদের সুদ সমস্যা ও অর্থনীতির মৌলিক সমাধান, ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমান, কুরআন ও বিজ্ঞান, আওরঙ্গজেব, মোসলেম বীরাঙ্গনা, ইসলামের শিক্ষা, হজরতের জীবনী, রোজনামচা, পৌরাণিক ও বৈদিক যুগ, ইসলাম ও রাজনীতি, তাপসকাহিনী, শিল্পক্ষেত্রে মুসলমান, রাজনীতির ক্ষেত্রে আলেম সমাজের দান, শুভ সমাচার, স্পেনের ইতিহাস, বঙ্গীয় মুসলমান সমাজের জাতীয় উন্নতির উপায়, আত্মজীবনী পরিশিষ্ট, একটি ইংরেজি প্রবন্ধ, উর্দু বাংলা প্রবন্ধ।
দুই শতাব্দীর ইংরেজ সভ্যতার চাপ ও বিজাতীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব তখন জনগণের মনকে পরিপূর্ণভাবে আচ্ছাদিত করে ফেলেছিল। তিনি এ মহাবিপর্যয়ের সার্বিক মোকাবেলার উদ্দেশ্যে বাস্তবমুখী কর্মসূচি হাতে নেন। তিনি অনুধাবন করেন যে, বিভিন্ন মতাবলম্বী আলিম সমাজকে কমন প্লাটফর্মে দাঁড় করানো ছাড়া এ প্রয়াস সফল হতে পারে না। ফুরফুরার পীর সাহেব মাওলানা আবু বকর ছিদ্দিকী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মাওলানা রুহুল আমিন, দৈনিক আজাদের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ও আহলে হাদিসের মাওলানা আবদুল্লাহিল বাকীর সমন্বয়ে গড়ে তোলেন ‘আঞ্জুমানে ওলামায়ে বাংলা’। ১৯৩৯ সালে কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে নিখিল বঙ্গ মৌলভী অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে ভাষণে তিনি বলেন, ‘আলিম ব্যতীত অন্য শ্রেণির লোকের নেতৃত্বাধীন ইসলামের তথা মুসলিম জাতির উন্নতির পথ প্রশস্ত হওয়ার উপায় আছে বলে বিশ্বাস করি না। যে নেতা স্বয়ং শরিয়তের বিধিবিধানের অধীন থাকবেন না, কুরআন–হাদিস মতে বলবেন না, তার পক্ষে মুসলমানের নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার থাকতে পারে না।’ ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় আলিমদের এ সংগঠন বিপ্লবী দাওয়াত নিয়ে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ও ম্রিয়মাণ মুসলমানদের নিজের পরিচয়, ঐতিহ্য ও অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে তোলে। তিনি খাসিয়া নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যে খ্রিষ্টান মিশনারিদের ধর্মপ্রচারের সফলতা দেখে সেখানে ইসলাম মিশন কায়েমের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১৯১৯ সালে আঞ্জুমানের কর্মক্ষেত্র হিসেবে আসাম ও খাসিয়া অঞ্চলে ‘ইসলাম মিশন’ চালু করা হয়। ১৯২৩ সালে উত্তর ভারতে শুদ্ধি অভিযানের ফলে কয়েক হাজার মুসলমান হিন্দু (মালকানা রাজপুত) হয়ে গেলে ইসলামাবাদীর পরামর্শে বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে গমন করেন।
সংবাদপত্র অত্যন্ত শক্তিশালী প্রচারমাধ্যম। জাতির মন ও মানসে জাগরণ তৈরি করতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনমত গঠন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং অগ্রসর করা সম্ভব। এ জন্যই তিনি মাদরাসার শিক্ষকতা ছেড়ে সাংবাদিকতা করার জন্য কলকাতায় গমন করেন। মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী নেতা হিসেবে সমসাময়িককালে তিনি তার প্রাণান্তকর শ্রম, সাধনা ও সংগ্রামের কারণে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন (প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)।
মাওলানা ইসলামাবাদী হাবলুল মতিন (১৯১২), মোহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনূর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। বাংলা ভাষায় পর্যায়ক্রমে দৈনিক সোলতান, দৈনিক ‘আমির’ ও মাসিক ‘আল–এসলাম’ প্রকাশের মাধ্যমে আবার প্রমাণ করে দেন যে, সিদ্ধান্তে যারা অটল এবং প্রলয় যাদের খড়কুটোর মতো তাড়িয়ে দিতে পারে না, তাদের শ্রম ও প্রয়াস কোনো দিন ব্যর্থ হয় না। সীতাকুণ্ড মাদরাসায় থাকাকালে তিনি মিসরের ‘আল–মানার’, ‘আল বিলাদ’ ও ‘আল–আহরাম’ নামক পাঠকপ্রিয় পত্রিকায় আরবিতে প্রবন্ধ লিখতেন। অন্য দিকে ভারতের দিল্লি ও লক্ষ্নৌর পত্রপত্রিকায় উর্দু ভাষায় বহু মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশ পেতে থাকে। মাওলানা আকরম খাঁ সম্পাদিত কলকাতার উর্দু দৈনিক পত্রিকা ‘যামানায়’ও (১৯২০–১৯২৪) তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লেখেন এবং এসব প্রবন্ধে মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের পরামর্শ দেন। যেহেতু মাদরাসায় তখন বাংলা পড়ানো হতো না, তাই তিনি দ্রুত বাংলা চর্চা করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলা ভাষায় সুন্দর প্রবন্ধ লেখার যোগ্যতা অর্জন করেন (মাওলানা জুলফিকার আহমদ কিসমতী, বাংলাদেশের কতিপয় আলেম ও পীর মাশায়েখ)।
১৯২৮ সালে তিনি নিজ দায়িত্বে দৈনিক ‘আম্বর’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি চট্টগ্রাম থেকে ‘ইসলামাবাদ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিচালনা করেছেন (ড. মুহাম্মদ আবদুল্লাহ্, বাংলাদেশে খ্যাতনামা আরবিবিদ)।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে মুসলিম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে তিনি তার চিন্তাধারা, অগাধ মনীষা ও বিপ্লবী চেতনা চার দিকে ছড়িয়ে দেন। অনল প্রবাহের কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর মতো আত্মসচেতন মনীষীর সাহচর্য ইসলামাবাদীকে সংগ্রামের পথে বজ্রকঠিন শপথে বলীয়ান করে তোলে। গ্রামে গ্রামে তিনি জনসেবা, আলোচনা ও পথসভা করে অধঃপতিত মুসলিম জাতিকে নবীন আলোর বন্দনা করতে শেখান।
ইসলামাবাদীর মনোভূমি মুসলিম স্বকীয়তাবোধে উজ্জীবিত ছিল। তাকে কখনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প স্পর্শ করতে পারেনি। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও গান্ধীর সাথে তার সম্পর্ক ছিল মধুর। এমনকি ১৯৪৩ সালে নেতাজীর ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’–কে তিনি গোপনে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের কর্মী হিসেবে তিনি মাঠে ময়দানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এ অপরাধে ব্রিটিশ সরকার তাকে মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত নেহরুর সাথে দিল্লির লালকেল্লার কারাগারে বন্দী করে রাখে বহুদিন। তাকে সেখান থেকে পাঞ্জাবের মিয়াঁওয়ালি জেলে স্থানান্তর করা হয় এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তখন তার বয়স ৬৫ বছর। কারা নির্যাতনের কারণে তার শরীর ভেঙে পড়ে। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে আমার ওপর যেভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন ব্রিটিশ সরকার করেছে, পৃথিবীর কোনো সভ্য জাতির ইতিহাসে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে না, কিন্তু তারা আমার দেশকে লুটে খাওয়ার জন্য আমাদের দেশে মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার করে চলেছেন, এই অত্যাচারের একদিন শেষ হবে, আমরা স্বাধীন হবো এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেই স্বাধীনতা ভোগ করবে এটি আমার বিশ্বাস।’ তিনি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ–এর বঙ্গীয় শাখার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৯০৩ সালে অবিভক্ত বাংলায় মুসলিম কনফারেন্সের আয়োজন করেন। ১৯০৬ সালে ‘মুসলিম সাহিত্য সমিতি’ প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মাওলানা প্রথম দিকে কংগ্রেসের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও ১৯২১ সালে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন। ইসলামাবাদী ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের অন্যতম স্থপতি। ১৯২৯ সালে মাদরাসা ছাত্রদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আসাম–বেঙ্গল জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে কৃষকপ্রজা পার্টির মনোনয়নে বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। খেলাফতের পতনের কারণেই মুসলিম সমাজ আজ হতাশাগ্রস্ত ও নেতৃত্বহারা এবং খেলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ শান্তি, সমৃদ্ধি ও হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। এমন একটি দর্শন তিনি আজীবন লালন করে গেছেন।
মাওলানা ইসলামাবাদী ধর্মীয় পরিমণ্ডলে গড়ে উঠলেও উদার দৃষ্টিভঙ্গি তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিদেশী ইতিহাসবিদ ও প্রাচ্যবিদদের কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য খণ্ডন করার লক্ষ্যে তিনি যেন্দ আভেস্তা, বেদ–বেদান্ত, তালমুদ, বাইবেল ও ত্রিপিটক অধ্যয়নের জন্য আলিমদের পরামর্শ দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করেন যে, বিজাতীয় পক্ষপাতদুষ্ট মন্তব্যগুলোর যুক্তিযুক্ত ও তথ্যবহুল প্রত্যুত্তর দেয়ার জন্য যথেষ্ট গবেষণা ও যোগ্যতার একান্ত প্রয়োজন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রামের পশ্চিম পটিয়ার দেয়াং পাহাড়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য স্থানও নির্ধারণ করেন। ১৯১৫ সালে তিনি সরকার থেকে ৬০০ বিঘা জমি এবং জমিদার আলী খান থেকে ৫০০ কানি (এক কানিতে ৪০ শতক) ভূমি রেজিস্ট্রি মূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গ্রহণ করে কিছু কাজ শুরু করেছিলেন। মাওলানা শওকত আলী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। দেয়াং পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই স্থান পরিদর্শনে এসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মওলানা আকরম খাঁ, মুন্সী রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী প্রমুখ (বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা, ২২, আগস্ট ২০১৯)।
তার অনুসারীরা পরবর্তী পর্যায়ে প্রস্তাবিত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তব রূপদানে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখেননি অথবা রাখতে পারেননি। জাতিকে যিনি সাংবাদিকতায়, সাহিত্যে, রাজনীতি ও শিক্ষা প্রসারে অনেক কিছু উজাড় করে দিলেন, তাকে আমরা কী দিতে পেরেছি? তার জ্ঞানগর্ভ ও তথ্যবহুল ৪২টি গ্রন্থকে ছাপার অক্ষরে পাঠকের হাতে দিতে পারিনি। না পেরেছি তার কাজ সমাপ্ত করতে। এসব প্রশ্ন আমাদের বিবেককে আঘাত হানে প্রবলভাবে। দায়সারাগোছের আলোচনা, তার অমর সৃষ্টির প্রতি উপহাসস্বরূপ। ১৯৫৭ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত স্মরণ সভায় মওলানা আকরম খাঁ বলেছিলেন, ‘ইসলামাবাদীকে স্মরণ করার অর্থ হলো আজ জাতি তার অতীতকে ভালোবাসতে আরম্ভ করেছে এবং অতীতের সংগ্রাম, দেশনায়ক, মনীষী ও কৃতীদের প্রতি সশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে।’ কথাশিল্পী অধ্যাপক আবুল ফজল দুঃখভরে লিখেছেন : ‘মনিরুজ্জামান সারা জীবনই সমাজ সম্বন্ধে ভেবেছেন, চিন্তা করেছেন, স্বপ্নের বীজ বপন করতে চেয়েছেন বহু ক্ষেত্রে। মাটি অনুকূল ছিল না বলে হয়তো এসব বীজের অনেকগুলোই অঙ্কুরিত হতে সুযোগ পায়নি।’ মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী তার সমাধিফলকে উৎকীর্ণ করে রাখার জন্য স্মরণলিপি লিখে গেছেন। এটি মূলত একটি ফার্সি কবিতার বাংলা অনুবাদ। ‘পথিক : ক্ষণেকের তরে বস মোর শিরে / ফাতেহা পড়িয়া যাও নিজ নিজ ঘরে / যে জন আসিবে মোর সমাধি পাশে। / ফাতেহা পড়িয়া যাবে মম মুক্তির আশে। / অধম মনিরুজ্জামান নাম আমার / এছলামাবাদী বলে সর্বত্র প্রচার।’
লেখক : অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা