সরকার পতনের পর থেকে চলমান ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠকে গত কয়েকদিনের সংঘটিত ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও দলের পক্ষে থেকে তুলে ধরেছেন তিনি। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যকে ‘সবচেয়ে বড় প্রয়োজন’ হিসেবে তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বলেছি যে, আমাদের নির্বাচন যেটা বেশি প্রয়োজন…সংস্কারগুলো যেগুলো প্রয়োজন, সেগুলো সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার কথা আমরা বলে এসেছি। এটা অত্যন্ত জরুরি। খবর বিডিনিউজের।
এ দিনের বৈঠকের উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সামপ্রতিক উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ইসকন পরিস্থিতি, ছাত্রদের কয়েকটি কলেজের সমস্যা এই বিষয়গুলো নিয়ে দলের পক্ষ থেকে যে উদ্বেগ সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। আমরা আশা করেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা তিনি তার উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে অতি দ্রুত এসব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করবেন এবং দেশে যেন কোনো রকমের অবস্থা সৃষ্টি না হয় যে অবস্থার মধ্য দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন যেটা প্রয়োজন আমরা বলে এসেছি যে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ করে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা দেশের স্থিতিশীলতা এটাকে যারা বিনষ্ট করতে চায় তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধ করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই একটা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সেই কথাগুলো আমরা বলে এসেছি। সামগ্রিকভাবে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সন্ধ্যায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন। বৈঠকে উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান ও মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এক ঘণ্টার অধিক সময়ের এ বৈঠকে দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ, এলাকাভিত্তিক টিসিবির ট্রাকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি বাড়ানো, সারাদেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং কৃষিতে সার সরবারহ, শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের বেতন–ভাতা নিয়মিত রাখা, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, কৃষিতে বিশেষ করে সার বিতরণ এখনও ফ্যাসিস্টদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করছে। সেগুলো জনগণের পক্ষে যারা আছে তাদের কাছে নিয়ে আসার কথা বলেছি।
বৈঠকে সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদের মত ইউনিয়ন পরিষদগুলোও ভেঙে দিয়ে পরবর্তী নির্বাচনগুলো করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানানোর কথা তুলে ধরেন তিনি। একইভাবে ট্রেড বডিগুলো ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে এসব পুনরায় সুষ্ঠভাবে নিয়ে আসার জন্য আমরা বলেছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। আমরা বিশ্বাস করি উনারা এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।