পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব বরেণ্য কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন বলেছেন, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষে আমাদের বেশি বেশি মানবিকতা ও চেতনাসঞ্চারের চর্চা করতে হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে মানবিক ও চেতনাবোধের কোনো বিকল্প নেই। সামাজিকভাবে উন্নয়নের জন্য, দিগন্ত বিস্তারের জন্য, যার যা কিছু করার আছে তা যেন মানুষ কাজে লাগায়। জাতির অগ্রগামিতার জন্য, সমাজের মানুষের জন্য ব্যয় করে। একটি শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার জন্য পদ্মবীণা ফাউন্ডেশনের মতো কাজ অনুসরণীয়। আমাদের সবাইকে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। জীবনের জয়গান গাইতে হবে। সত্যের জয়গান গেয়ে গেয়ে আমাদের প্রজন্মকে আলোকিত করে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য দেশের বরেণ্য চার ব্যক্তিত্ব পেলেন পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক ২০২২। সম্মাননা ও পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্বরা হলেন -সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, বিজ্ঞান লেখক, অনুবাদক সুব্রত বড়ুয়া ও কবি, কথাসাহিত্যিক রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানে পদকপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা পদক, উত্তরীয়, ক্রেস্ট, সনদ, নগদ অর্থ ও উপহার সামগ্রী তুলে দেন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি বড়ুয়া ও বীণা পানি বড়ুয়া। পদ্মবীণা ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সূচনা বক্তব্য দেন পদ্মবীণা সম্মাননা ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ। স্বাগত বক্তব্য দেন সদস্যসচিব প্রকৌশলী পুলক কান্তি বড়ুয়া। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, সাহিত্যিক ড. আনোয়ারা আলম। সঞ্চালনায় ছিলেন বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমু। পদকপ্রাপ্ত চার ব্যক্তিত্বে জীবনী পাঠ করেন সমুদ্র বড়ুয়া টিটু। সমন্বয়ক ছিলেন সরিৎ চৌধুরী সাজু।
জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। এতে মৃত্তিকা চৌধুরী ও প্রমা অবন্তির পরিচালনায় বরণনৃত্য পরিবেশিত হয়।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, মানবজীবন খুবই স্বল্প। এই স্বল্প সময়ে মানুষকে দেশ ও সমাজের কল্যাণে কিছু নিদর্শন রেখে যেতে হয়। এ পৃথিবীতে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নয়, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সুন্দরের চর্চা থাকতে হবে। সমাজের প্রতিটি শিশু, প্রতিটি মানুষ যেন মানুষের মর্যাদা পায় সেভাবে দেশটাকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রতিটি মানুষকে মর্যাদা দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে একসাথে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
কথাসাহিত্যিক সুব্রত বড়ুয়া বলেন, সংস্কৃতির কাজ হলো সুন্দরের সাধনা করা, জীবনকে প্রসারিত করা। জীবনের পথচলাকে আনন্দময় করে তোলাই মানুষের কাজ। সমাজের মানুষের জন্য আর্থিক না হোক, কায়িক না হোক, মানসিকভাবে হলেও কাজ করতে পারি। নিজে প্রসারিত হয়ে সমাজকে মানুষের মননকে প্রসারিত করতে হবে। নিজেকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। সব মানুষের এটা চেষ্টা করা উচিত। যারা সমাজে পিছিয়ে আছেন তাদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। এজন্য সততা দরকার।
কবি সম্পদ বড়ুয়া ভুটানের হেপিনেস ইনডেঙ-এর কথা তুলে ধরে বলেন, আপনি তখনই খুশি যখন আপনার প্রতিবেশী হাসবে, আপনি তখনই সুখী যখন আপনার পাশের মানুষ সুখী।