জহুর হোসেন চৌধুরী (১৯২২–১৯৮০)। লেখক, সাংবাদিক। প্রগতিশীল চিন্তাধারার এই কলম সৈনিক তাঁর জীবদ্দশায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে নিরন্তর লিখে গেছেন। তিনি আজীবন দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন।সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে জুন। বর্তমান ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর গ্রামে। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকরজীবী। তিনি ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। তার বাবার কর্মস্থল সিরাজগঞ্জে। সিরাজগঞ্জের এক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জহুর হোসেন চৌধুরী ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর জহুর হোসেন চৌধুরী কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে আইএ পাস এবং ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ইতিহাসে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। সাংবাদিকতার মাধ্যমেই পেশাগত জীবনের শুরু। প্রথমে যোগ দেন কলকাতার বিখ্যাত পত্রিকা ‘স্টেটসম্যান’–এ। এরপর কাজ করেছেন দৈনিক ‘আজাদ’ এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘কমরেড’ পত্রিকায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর কিছুকাল জহুর হোসেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ‘পাকিস্তান অবজারভার’–এ কাজ করেন। তবে সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘকাল কেটেছে দৈনিক সংবাদ–এ। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সতেরো বছর তিনি এই পত্রিকায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তীক্ষ্ণ মেধাবী এবং বলিষ্ঠ ও সাহসী সম্পাদক হিসেবে তিনি তৎকালীন রাজনীতি নিয়ে সম্পাদকীয় ও বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তাঁর ক্ষুরধার কলম চলেছে পাকিস্তানি চক্রান্তের বিরুদ্ধে, অসাম্প্রদায়িকতা আর মানবতাবিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হলে তিনি ‘কাউন্টার পয়েন্ট’ নামে একটি ইংরেজি সাময়িকী সম্পাদনা করেন। আজীবন তিনি দৈনিক সংবাদের অন্যতম পরিচালক ছিলেন। স্বাধীনতার পর সংবাদে প্রকাশিত ‘দরবারে জহুর’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। জহুর হোসেন চৌধুরী ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে জেবুন্নেসা–মাহবুবউল্লাহ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৮২–তে পান মরণোত্তর ‘একুশে পদক’। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ই ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।