জলাবদ্ধতার কারণে খাতুনগঞ্জে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় সেটি নিরুপণে পরিচালিত সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদনের ওপর সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘ইকনোমিক ইমপেক্ট অব ওয়াটারলগিং অন লোকাল ট্রেড : দ্যা কেইস স্টাডি অব খাতুনগঞ্জ, হোলসেল কমোডিটি মার্কেট চট্টগ্রাম’ শীর্ষক ড্রাফট রিপোর্ট শেয়ারিং কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন এবং ইউএনডিপি। গতকাল রোববার আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্ল্যানিং কমিশন প্রোগ্রাম ডিভিশনের চিফ এবং অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আহসান হোসেন।
তিনি বলেন, যেকোনো সমস্যা সমাধানে গবেষণা ও সমীক্ষা পরিচালনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাতুনগঞ্জ ও আশেপাশের এলাকার জলাবদ্ধতার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে সেটি নিরুপণের লক্ষ্যে এই রিসার্চ করা হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পেশ করা হবে। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম চেম্বারকে অগ্রণী ভূমিকা পালনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। জয়েন্ট চিফ ও প্রকল্প পরিচালক-এনআরপি ড. নুরুন নাহার বলেন, জলাবদ্ধতা বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা। তবে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি সমাধান করা সম্ভব। আজকের এই কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা এই সমীক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। আমরা এটি নীতি নির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করব।
বুয়েটের ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের ডিন প্রফেসর খন্দকার শাব্বির আহমেদ বলেন, সমীক্ষা রিপোর্টটি বিজ্ঞানসম্মত। রাজপথগুলো কাজে লাগিয়ে নগরীর বিন্যাস পুনরুদ্ধার করা যায়। এই সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে আরও পর্যালোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা এবং সরকারি, আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে জলবায়ু তহবিল ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে জলাবদ্ধতার কারণে খাতুনগঞ্জে দোকান ও গুদামের মালামাল নষ্ট হয়ে শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। চাক্তাই খালকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কার্যকরী পরিকল্পনা করা উচিত। চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করা, নালা নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার করা, চাক্তাই খালকে নৌ-চলাচলের উপযোগী করা, খালের মাটি দ্রুত উত্তোলন ও গভীরতা নিশ্চিত করা, খালের দুই পাড়ে রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মিঠা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের অনুরোধ জানান তিনি।
চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন বলেন, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, চাক্তাইসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যমান নালা নর্দমা একটির সাথে অপরটি সংযুক্ত হলেও তা হারিয়ে গেছে। এসব সংযোগ পুনরুদ্ধার করে আপাতত স্বল্পমেয়াদী সমাধানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের বিষয় বিবেচনা করা দরকার।
চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ নাগরিকদের সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে খাতুনগঞ্জকে ইতালির ভেনিস নগরীর আদলে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার অনুরোধ জানান।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বলেন, ২০০৩-০৪ সালে চাক্তাই খালের তলা পাকা করার কাজ ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যাচাই বাছাই ছাড়া তলার মাটি অপসারণ ব্যতীত বহদ্দারহাট থেকে খাতুনগঞ্জের পোড়াভিটা পর্যন্ত চার কিলোমিটারে তলা পাকা করার ফলে খালের তলদেশ ৩-৪ ফুট ভরাট হয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে পাকার উপর ৩ থেকে ৪ ফুট আবর্জনায় ভরাট, অবৈধ দখল-সব মিলিয়ে মৃতপ্রায় চাক্তাই খাল। আমরা নতুন কোনো পরিকল্পনা চাই না। বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত চাক্তাই খালের নাব্যতা ও প্রশস্ততা ফিরিয়ে দিলে নৌ বাণিজ্য ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান নাজমুল লতিফ ও চসিকের চিফ সিটি প্ল্যানার আর্কিটেকচার এ কে এম রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন চেম্বার পরিচালক এ কে এম আকতার হোসেন, মো. আবদুল মান্নান সোহেল, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও সাকিফ আহমেদ সালাম, ইউএনডিপির প্রতিনিধি জাহিদুল হক, এনআরপির সহকারী প্রকল্প পরিচালক ফাতেমা প্রমুখ। স্টাডি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এনআরপির কনসালটেন্ট ড. রিয়াজ আক্তার মল্লিক, ড. নজরুল ইসলাম, ড. আবু তৈয়ব মো. শাহজাহান ও সুমাইয়া বিনতে মামুন।