নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতির ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চট্টগ্রাম আসা নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন দেখতে (জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কার্যক্রম) আসবেন; কিন্তু এটা কাজের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে। যদি কাজের অগ্রগতি না হয় প্রধান উপদেষ্টাকে আনতেও আমরা সংকোচবোধ করব। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আসতে প্রস্তুত। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সাফল্য, অগ্রগতি যদি হয় তখন উনাকে আমরা আসতে বলব।
গতকাল শনিবার বিকালে দক্ষিণ আগ্রাবাদের আবিদার পাড়ার ঠান্ডা মিয়া ব্রিজ, ডাইল ব্রিজ ও নয় নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন মহেশ খাল খনন কর্মসূচি উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। উদ্বোধন শেষে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বির্জা খাল, চট্টগ্রাম মেডিকেলের পূর্ব গেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পরিদর্শন করা হয়। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা চাচ্ছি সবাই মিলে কাজ করতে। এখন তো আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। সব দল, প্রশাসন সবাই একসঙ্গে কাজ করছে। সুতরাং আশানুরূপ উন্নতি হবে এবং প্রধান উপদেষ্টা এসে কাজের যে অগ্রগতি হয়েছে তা চূড়ান্তভাবে দেখবেন।
জলাবদ্ধতা সহনীয় রাখতে খালের পাশাপাশি নগরের ড্রেনগুলোও পরিষ্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা আগামী মে মাসে একদম শেষ হয়ে যাবে তা না। আশা করি বহুলাংশে উন্নতি হবে। পানি যদি জমেও স্বল্প সময়ে চলে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বয়ে এই সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে। তিনি বলেন, ডেপুটি সেক্রেটারির ওখানে (জেলা প্রশাসন) ১২৬টি ছোট ছোট প্রকল্প করা হয়েছে, আশা করি সেগুলোও শুরু হবে।
খাল–নালা পরিষ্কারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চাই। মেয়র মহোদয় আছেন, উনার রাজনৈতিক দল আছে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছে সবাই আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজগুলো করবে। এছাড়া চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সংস্থার যৌথ প্রচেষ্টা দরকার।
মেগা প্রকল্প বহির্ভূত ২১টি খাল খননের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কোনো রেজাল্ট নেই। তাই আমরা বলছি, আগে কাজ হোক এবং দৃশ্যমান উন্নতি দেখি। টাকা কোনো সমস্যা না। পাইলট হিসেবে দেখছি। এরপর চট্টগ্রামবাসী যদি বলে বন্যা কম হয়েছে, হলেও স্বল্পস্থায়ী ছিল, তাহলে টাকার সমস্যা হবে না। আগে নিশ্চিত করতে হবে টাকার সদ্ব্যবহার হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, দুর্নীতির জন্য আলাদা সংস্থা আছে। দুর্নীতির বিষয়টি উনারা দেখবেন। যার যে কাজ সে করবে। আমাদের কাজ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড–সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করা। দুর্নীতি দেখার দায়িত্ব যাদের, দুদক সেটা দেখবে।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধ করতে হবে। বেআইনি সংযোগ রোধ করতে হবে। যারা বাসা–বাড়িতে এসি চালান তারা এটা ২৫ ডিগ্রি বা উপরে রাখেন। ২৫ ডিগ্রিতে যথেষ্ট ঠান্ডা হয়। তিনি বলেন, আজ সপ্তম রোজা পর্যন্ত বিদ্যুতের কোনো সমস্যা হয়নি। জনগণের সহযোগিতা পেলে লোডশেডিংমুক্ত রমজান পার করতে পারব।
তিনি বলেন, গরমের মাত্রা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি নির্ধারিত হবে। সরকার এলএনজি আমদানি বৃদ্ধি, ট্রান্সফরমার মেরামত এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়নে কাজ করছে। বিদ্যুৎ বিতরণের ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধ করতে হবে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জনগণের স্বার্থে যেখানে নালা আছে সেখানে যদি কেউ বিল্ডিং নির্মাণ করে থাকে, তা অপসারণ করতে হবে। আমরা জনগণের স্বার্থে কাজ করছি এবং করব। চট্টগ্রামের খাল পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কার্যক্রম চলছে। এছাড়া ১৬শ কিলোমিটার নালার পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এটি চলমান থাকবে। আমরা আশা করছি, সামনের বছর অর্থাৎ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এ বছর যাতে জলাবদ্ধতা কমে আসে, সে লক্ষ্যে খাল ও নালা পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জনগণকে সচেতন করতে প্লাস্টিক ও পলিথিন না ফেলার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ‘প্লাস্টিক এঙচেঞ্জ’ কর্মসূচির আওতায় প্লাস্টিকের পরিবর্তে চাল, ডাল, মুরগি ও পেঁয়াজ বিতরণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডে এঙচেঞ্জিং প্রোগ্রাম এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে, যাতে জনগণ খাল ও নালায় ময়লা না ফেলে। এটি আমাদের একার শহর নয়, সবার শহর। এই শহরে আমাদের পূর্বপুরুষরা চলাফেরা করেছেন, আমরা করছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানরা করবে। তাই আমাদের সবার স্বার্থে শহরকে পরিষ্কার ও সুন্দর রাখা জরুরি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ।