বিশ্বকাপের আগে একেবারেই ছন্নছাড়া ছিল বাংলাদেশ। ব্যাটারদের ব্যাটে নেই রান। বোলাররা পারছেন না জায়গামত বল ফেলতে। যার ফল ক্রমাগত হার। এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার। যা মেনে নিতে পারেনি সমর্থকরা। সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্রই চলছে সমালোচনা। সমালোচকের তীরে বিদ্ধ হতে হতে বাংলাদেশ দল যেন আত্মবিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছে। তাই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা যখন খেলতে নামছিল তখন পাহাড়সম চাপ টাইগারদের উপর। তার উপর ম্যাচটা শ্রীলংকার বিপক্ষে। যে দলটির সাথে বাংলাদেশের ম্যাচ মানে অন্য লড়াই। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা দল যেন চির শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তাই এমন একটি দলের সাথে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে যেন চাপে পিষ্ট হচ্ছিল টাইগাররা। তবে শেষ পর্যন্ত সব চাপ সরিয়ে দারুণ স্বস্তির এক জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ। অন্তত সমালোচকদের যেন একটা জবাব দিতে পারল টাইগাররা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, সেটাও সহজ ম্যাচকে কঠিন করে। স্নায়ু ক্ষয় করে, রোমাঞ্চ জাগিয়ে। শ্রীলংকাকে ২ উইকেটে হারিয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে বিশ্বকাপে শুরুটা যেমন শুভ হলো, তেমনি টানা চার ম্যাচে হারের পর জয়ের দেখা পেল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যদিও এই ম্যাচেও দলের টপ অর্ডারের ব্যাটাররা হয়েছেন ব্যর্থ। তবে বাংলাদেশের এই জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল বোলাররা। মোস্তাফিজের কাটার, রিশাদের ঘূর্ণি আর তাসকিনের গতির কাছে পরাস্ত লংকান ব্যাটাররা। বোলাররা দারুণ বল করে লংকানদের মাত্র ১২৪ রানে বেঁধে ফেলেছিল। আর সে রান তাড়া করতে নেমে মাঝে মাঝে পথ হারালেও শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যে জয়টা খুব বেশি দরকার ছিল বাংলাদেশের জন্য। এই একটি জয় কিছুটা হলেও সে চাপ সরাতে পেরেছে টাইগার ক্রিকেটাররা।
ডালাসের গ্রান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টসে জিতে শ্রীলংকাকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেন বোলাররা। ২১ রানে প্রথম আঘাত হানেন তাসকিন। ফেরান ১০ রান করা কুশল মেন্ডিসকে। এরপর মোস্তাফিজের আঘাতে ফিরেন কামিন্দু মেন্ডিস। তৃতীয় উইকেটে এগুনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন নিশাংকা এবং ধনঞ্জয়া। এবারো মোস্তাফিজের আঘাত। এবার তার শিকার নিশাংকা। ২৮ বলে ৪৭ রান করে ফিরেন এই ওপেনার। এরপর ধনঞ্জায়া এবং আশালাংকা ৩০ রান যোগ করেন। এ জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। ১৯ রান করা আশালাংকাকে ডিপ মিডউইকেটে সাকিবের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান রিশাদ। পরের বলে লংকান অধিনায়ক হাসারাঙ্গাকে যেভাবে ফেরালেন তাতে কিছুই করার ছিল না হাসারাঙ্গার। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন রিশাদ। কিন্তু হয়নি। পরের ওভারে আবার রিশাদের আঘাত। এবার তার শিকার ২১ রান করা ধনঞ্জয়া। ১৪.১ ওভারে চতুর্থ উইকেট হিসেবে আশালাংকা যখন ফিরেন তখন লংকানদের সংগ্রহ ১০০ রান। পরের ৬ উইকেট হারায় লংকানরা মাত্র ২৫ রানে। মোস্তাফিজ, তাসকিন, তানজিম সাকিবদের তোপের মুখে পড়ে ১২৪ রানে অল আউট হয় শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মোস্তাফিজ ৩ উইকেট নিয়েছেন ১৭ রানে। রিশাদের তিন উইকেট এসেছে ২২ রান খরচায়। তাসকিন ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ২৫ রান।
জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা যথারীতি বিবর্ণ। প্রথম ওভারেই ফিরলেন সৌম্য সরকার রানের খাতা খোলার আগে। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড গড়লেন সৌম্য। পরের ওভারের তুষারার বল আঘাত হানে তানজিদ তামিমের উইকেটে। ৩ রান করেন এই ওপেনার। লিটনের সাথে ২২ রান যোগ করেছিলেন শান্ত। তবে সেখানে অধিনায়কের অবদান ৭ রান। আর সে রান তুলতে শান্ত খেলেছেন ১৩ বল। অনেকটা ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে ফিরলেন শান্ত। এবার প্রতিরোধ গড়লেন হৃদয় এবং লিটন। দারুণ জুটি গড়ে দলকে জয়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন। হাসারঙ্গার করা ১২ ওভারে পরপর তিন বলে তিন ছক্কা মেরে ম্যাচটাকে আরো সহজ করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু লংকান অধিনায়কের পরের বলে ফিরলেন হৃদয়। ২০ বলে ৪০ রান করেন ইনফর্ম এই ব্যাটার। সে সঙ্গে ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। কে জানতো এরপর আবার ম্যাচ লাগাম ছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে। ৮ রান পর ফিরেন লিটন দাশ। ফিরে আসার আগে ৩৮ বলে ৩৬ রান করেন এই ওপেনার। এরপরও ভালই চলছিল বাংলাদেশের রথ। কারণ তখন যে উইকেটে সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু পাথিরানার বলে যেভাবে শটটা খেলতে গেলেন সাকিব তা মোটেও প্রয়োজন ছিল না। সে অপ্রয়োজনীয় এক শট খেলে থিকসানার দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন সাকিব। বাংলাদেশের উপর চাপ যেন আরো বাড়ছিল। পরের ওভারে নুয়ান তুষারা যখন রিশাদকে বোল্ড করে ফেরান তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১১৩। পরের বলে তাসকিন আহমেদকে এলবিডব্লিউ করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন এই লংকান পেসার। যদিও হ্যাটট্রিক হয়নি। একপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ থাকলেও অপরপ্রান্তে যে দুজন রয়েছে তাদের উপর যেন ভরসা রাখতে পারছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের দরকার ১২ রান। সানাকার করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলটা ছিল ফুলটস। আর সে বলের যা শাস্তি তা ঠিকই দিলেন মাহমদুউল্লাহ। বল পাঠিয়ে দিলেন উড়িয়ে সীমানার বাইরে। পরের বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন তানজিম সাকিবকে। তৃতীয় বলটি ডট খেললেন সাকিব। চতুর্থ বলে নিলেন এক রান। পঞ্চম বলটা ডট। ষষ্ট বলটা হলো ওয়াইড। যদিও সে বলে জোরালো আপিল ছিল লংকানদের। কিন্তু রিভিউতে কট বিহাইন্ডের সে আপিল বাতিল হয়ে যায়। ১৯তম ওভারের শেষ বলে দুই রান নিয়ে এক ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের আনন্দে মাতে মাহমুদউল্লাহ। ১৩ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন।