জম্মু-কাশ্মীরে বিস্ফোরণ গোলাগুলি দিল্লির ১৩৮টি ফ্লাইট বাতিল

৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান : ভারত । ২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, দ্বিমত সেনাবাহিনীর । আইপিএল স্থগিত, পর্যটকশূন্য কাশ্মীর

| শনিবার , ১০ মে, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

ভারতপাকিস্তান সীমান্তবর্তী রাজ্য পাঞ্জাবের বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ড্রোন হামলা হচ্ছে। ড্রোনগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চলছে। পুরো শহরে ব্ল্যাক আউট চলছে। কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরেও বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা গেছে। কাশ্মীরের বেশিরভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ নেই।

এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরে গোলাগুলি চলছে। কুপওয়ারা জেলার করনার ও নঙ্গধারে, উরি আর পুঞ্চ জেলায় ভারতীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে মুজফ্‌ফরাবাদেও ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। এর আগে জম্মুকাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গতকাল সকালে জম্মু শহরে গেছেন, সেখান থেকে এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, জম্মুতে ব্ল্যাক আউট হয়ে গেছে, পুরো শহরে সাইরেন বাজছে। দ্বিতীয় একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমি যেখানে আছি সেখান থেকে মাঝে মাঝেই বিস্ফোরণে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত ভারী গোলার আওয়াজ।

এদিকে ভারতপাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ও সীমান্ত অঞ্চলে হামলার আশঙ্কার কারণে উড়োজাহাজ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী দিল্লির বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীন মিলে বাতিল হয়েছে ১৩৮টি ফ্লাইট। বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ৬৬টি বহির্গামী অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এবং ৬৩টি আগত অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট, ৫টি বহির্গামী আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এবং ৪টি আগত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ফ্লাইটগুলো বাতিল হয়।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে তাদের সামরিক পরিকাঠামোগুলোকে নিশানা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সিন্দুর’এর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে গতকাল ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বলেন, পাকিস্তান থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। লেহ থেকে শুরু করে গুজরাত পর্যন্ত ৩৬টি জায়গায় হামলা হয়েছে। ভারতীয় সামরিক বাহিনী অনেকগুলো ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। আকাশপথে এত ব্যাপক সংখ্যায় অনুপ্রবেশের উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত আমাদের বিমানপ্রতিরোধী ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখা এবং গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করা। যেসব ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে এই ড্রোনগুলো তুরস্কে তৈরি। পাকিস্তানের তরফ থেকে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি চালানো হচ্ছে। এই গোলাগুলিতে কয়েকজন ভারতীয় সেনাসদস্য হতাহত হয়েছে। ভারতে পাল্টা হামলায় পাকিস্তানের বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ঠিক কতজন ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি তিনি। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ গত বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়েছিলেন, আমরা এটা অস্বীকার করছি। আমরা এখনো পর্যন্ত কিছুই করিনি। যখন পাকিস্তান হামলা করবে তখন সবাই জানতে পারবে। এছাড়া ভারতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী। লাইন অফ কন্ট্রোলে (এলওসি) ভারতীয় গোলাবর্ষণের জবাবে কেবল ‘ভারতীয় সামরিক পোস্টের বিরুদ্ধে ছোট অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে’ বলে তিনি দাবি করেন। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পাকিস্তান ড্রোন বা রকেট হামলায় জড়িত নয়। আমরা শুধু ছোট অস্ত্র দিয়ে ভারতীয় ফাঁড়িগুলোকে লক্ষ্য করছি যারা বেসামরিক জনগণের ওপর গুলি চালাচ্ছে। তিনি ভারতের অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করে বলেন, আধুনিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিটি হামলার ইলেকট্রনিক সিগন্যাল থাকে। ভারতীয় মিডিয়া পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে, কিন্তু ধ্বংসাবশেষ কোথায়? যদি ভারত পাইলটকে ধরে থাকে তাহলে পাইলট কোথায়? তিনি বলেন, পহেলগাম হামলার জন্য ভারত এপর্যন্ত পাকিস্তানকে দায়ী করার মতো কোনো প্রমাণ দেয়নি। দুই রাষ্ট্রের বিষয়ে ভারতকে এককভাবে বিচারক হতে দেয়া যায় না।

২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি : পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছিলেন, ৪০ থেকে ৫০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানান, বুধবার থেকে প্রায় ২৫ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি। খাজা আসিফ স্বীকার করেন, পাকিস্তানও ‘ক্ষতির সম্মুখীন’ হয়েছে, তবে তিনি সেই সংখ্যা জানেন না। তিনি দাবি করেন, ভারত সংঘর্ষের সূচনা করেছে এবং ভারতের দুটি ব্রিগেড সদর দফতর হামলার শিকার হয়েছে। যদিও দিল্লি এই দুটি দাবিই অস্বীকার করেছে।

তবে ভারতের কতজন সেনা নিহত হয়েছে, তা নিয়ে পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যেই দ্বিমত তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও এখন সামপ্রতিক দিনগুলিতে নিহত ভারতীয় সৈন্যের সংখ্যা সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া মন্তব্যের বিরোধিতা করছে।

সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র এখন বলছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গুলি চালানোর ফলে কত ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে, তার কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই এবং মন্ত্রীরা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘কথাবার্তা’র উপর ভিত্তি করে তাদের পরিসংখ্যানের ধারণা দিচ্ছেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকারের বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি।

আইপিএল স্থগিত : বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। আইপিএলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে এই তথ্য জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতেই ধরমশালা স্টেডিয়ামে চলমান পাঞ্জাব কিংস এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচটি মাঝপথেই বন্ধ করে দর্শকদের মাঠ খালি করতে বলে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদ থেকে সরে যেতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের মুজাফফারাবাদের একটি হোটেলে অবস্থানরত এক পর্যটক জানান, চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের কারণে অন্য সময় যে রুমগুলো প্রিমিয়াম হিসেবে বিবেচিত হতো এখন এগুলো খুব বেশি উন্মুক্ত মনে হচ্ছে। হোটেলের কক্ষগুলো ধীরে ধীরে খালি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার হোটেলের একজন কর্মী বলেন, আমাদের এখন আর কোনো অতিথি বা পর্যটক নেই। এখানে এখনো যারা আছেন তাদেরকেও অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়া হবে।

গত বুধবার ভোরে ভারত যে জায়গাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানোর কথা বলেছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের প্রশাসনিক কেন্দ্র মুজাফফারাবাদ। গত বৃহস্পতিবার রাতে শহরটিকে পুরোপুরি বিদ্যুৎবিছিন্ন রাখা হয়েছিল। এটি একটি পরামর্শ হলেও কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই বেশিরভাগ মানুষ এই নির্দেশনা পালন করেছেন। ঘরবাড়ি, হোটেল কিংবা দোকানের আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছিল। সাধারণ সময়ে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের শোরগোলে ব্যস্ত থাকা সড়কগুলো ছিল ভয়ংকর নীরব।

ভারতপাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক ভাষার তীব্রতা এবং সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে কথার ধরন এই অঞ্চলে, বিশেষ করে সীমান্ত নিকটবর্তী এসব এলাকায় চরম উদ্বেগ তৈরি করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এবার কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা প্রায় ৯ লাখ
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশ যাত্রা ঠেকানোর দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের নয় : উপদেষ্টা