জমে থাকা গ্যাসে হঠাৎ বিস্ফোরণ একতলা বাড়ি বিধ্বস্ত, দগ্ধ চার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চান্দগাঁওয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে একটি একতলা বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি। বিধ্বস্ত বাড়িটির আট বাসিন্দা আহত হয়েছেন, এদের মধ্যে দগ্ধ হয়েছেন চারজন। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে চান্দগাঁও থানাধীন বলিরহাট এলাকায় আব্দুর রব সড়কের নজির বাপের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে পাঁচ নারী, দুই শিশু এবং এক কিশোর আছেন।

আহতরা হলেন, স্থানীয় মো. ইদ্রিসের স্ত্রী মায়মুনা আক্তার, মেয়ে ডলি আক্তার, পুত্রবধূ সোমা আক্তার, ডলি আক্তারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম এবং তাদের প্রতিবেশী নূর নাহার বেগম, নূর নাহারের দুই মেয়ে সানজিদা আক্তার ও রিনা আক্তার, ছেলে মো. হৃদয়। তারা আবদুর রউফ সড়কের পাশাপাশি দুটি বাড়ির বাসিন্দা। এদের মধ্যে মো. ইদ্রিসের স্ত্রী ডলি আক্তার মায়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন এবং আহতরা বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জমে থাকা গ্যাস বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসার পর হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে বিস্ফোরণ হলেও সকাল ১০টার দিকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তথ্য আসে। এরপর কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তবে এর আগেই আগুন নেভানো হয়।

ঘটনাস্থলে যাওয়া কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা বাহার উদ্দিন জানান, আনুমানিক দশ ফুট দৈর্ঘ্যের পাকা একতলা একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে। এ সময় আগুন লেগে গেলে ওই বাড়ির বাসিন্দারা দ্রুত বাড়ির ছাদে উঠে প্রাণরক্ষা করেন। আগুন অবশ্য দ্রুত নিভে যায়। এর মধ্যেই চারজন দগ্ধ হন। বাকি চারজন ইট, পাথর ছিটকে পড়ে আহত হয়েছেন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণে বাড়িটির চারটি দেয়াল পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় ১০ ফুট দূরে গিয়ে পড়েছে। ওই বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া আরেকটি বাড়ির টয়লেট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরের ভিতরে থাকা শোকেস বিস্ফোরণে বাইরে গিয়ে পড়েছে। এর থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে আরও একটি ভবনের সেফটিক ট্যাঙ্কের ওপরের লোহার ঢাকনা উড়ে গেছে এবং নিচতলার টাইলসসহ মেঝেতে ফাটল ধরেছে।

বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বাহার উদ্দিন বলেন, একতলা ভবনটির সেফটিক ট্যাঙ্কের পাইপ লাইন গেছে ভবনের সঙ্গে লাগোয়া নালা দিয়ে। সেই নালা দিয়ে আবার কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পাইপ লাইনও গেছে। রান্নার গ্যাস সেফটিক ট্যাঙ্কের পাইপলাইনে ঢুকে টয়লেট দিয়ে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। রাতে দরজাজানালা বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যে গ্যাস জমে যায়। ঘটনার সময় পরিবারের কেউ বিদ্যুতের সুইচ চাপলে হয়তো বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না কীভাবে বিস্ফোরণ বা কেন বিস্ফোরণ হয়েছে। সেটা তদন্তের পর বলা যাবে।

চান্দগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নারী ও শিশুসহ আটজন আহত হয়েছেন। তবে কারও অবস্থা গুরুতর নয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে। ফায়ার সার্ভিস ও কর্ণফুলী গ্যাসের টিম ঘটনাস্থলে এসে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান করছেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইদ্রিসের একতলা সেমিপাকা বাড়িটির দুপাশের দেয়াল বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে। অন্য দেয়ালগুলোতে ফাটল ধরেছে। ঘরের জিনিসপত্র কিছু বাইরে গিয়ে পড়েছে। ইদ্রিসের ঘরের ভেঙে পড়া একপাশের দেয়াল গিয়ে পড়েছে পাশের নূরনাহার বেগমের বেড়ার ঘরের ভেতরে।

স্থানীয়রা জানান, রাত ৩টার দিকে ওই বাড়িতে বিস্ফোরণে বোমার মতো শব্দ হয়েছে। তখন আগুন ধরে গিয়েছিল। এলাকার মানুষজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। চারটি দেয়াল বিধ্বস্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা প্রাণে বেঁচেছেন। না হলে বদ্ধ ঘরে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।

তবে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান বলেন, সেখানে আমাদের কর্মকর্তারা গিয়ে দেখেছেন। ওই বাড়িতে কোনো গ্যাস সংযোগ নেই। আর সেখানে গ্যাস লাইন লিকেজ হলেও সেটা ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে যাওয়ার সুযোগ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপহারের ঘরের চাবি হাতে পেলেন রূপনার মা
পরবর্তী নিবন্ধএনজিএস ফুড প্রোডাক্টের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে