জবরদস্তিতে পদত্যাগ, স্ট্রোক করা অধ্যক্ষ ভালো নেই

| শনিবার , ৩১ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নওগাঁয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপের মুখে পদত্যাগ করার পর যে শিক্ষকের জ্ঞান হারিয়ে ফেলার ভিডিও ভারাইল হয়েছে, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুদিন চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নওগাঁ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, নুরুল ইসলাম নামে সেই শিক্ষকের স্ট্রোক করেছিল বলে তারা ধারণা করছেন। দুদিন চিকিৎসার পরেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং আরও অবনতির কথা জানিয়েছেন স্বজনরা। খবর বিডিনিউজের।

অধ্যক্ষ নুরুলের বড় ভাই আবু নাছের আহম্মেদ বলেন, সে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, কথা যা বলছে, বোঝা যাচ্ছে না, ভেঙে ভেঙে বলছে। অবস্থা ভালো না বলেই ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদেরকে পদত্যাগের জন্য চাপের মধ্যে গত বুধবার নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই ঘটনা ঘটে।

শিক্ষককর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত ২৫ আগস্ট থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দাবি জানিয়ে আসছিলেন একদল শিক্ষার্থী। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকে সমঝোতাও হয়। তবে সেই সমঝোতার পরদিন আবার একদল শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে। সেখানে বহিরাগতরাও আসে, তারা অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের কটূক্তি ও চাপের মধ্যে এক পর্যায়ে তাকে পদত্যাগপত্রে সই করতে দেখা যায়। হঠাৎ করেই তিনি বুকে চেপে ধরে শুয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে ধরাধরি করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

অধ্যক্ষ নুরুলকে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয় নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকাল ৪টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দুদিন চিকিৎসার পর গতকাল সকালে অধ্যক্ষকে ঢাকায় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

এই শিক্ষককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক কাকলী হক। তিনি বলেন, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় একজন শিক্ষককে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উনার জ্ঞান ফিরে আসে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম উনি স্ট্রোক করেছিলেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম রবীন শিষও সমঝোতার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরেই অধ্যক্ষকে নিয়ে একটা অস্থিরতা চলছিল। মঙ্গলবার উভয় পক্ষের সঙ্গে আমি সভাও করেছি, সমঝোতার মধ্যে সভাটি শেষ হয়। কিন্তু রোববার আবার অস্থিরতা দেখা দেয়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ওই অধ্যক্ষের বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানেন উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান অস্থিরতা বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি সভা করেছি। যেখানে উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ধরনের অস্থিরতা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় কৃষকের ৮০ শতক সবজি ক্ষেত কেটে দিল দুর্বৃত্তরা
পরবর্তী নিবন্ধগুম : জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত চান ফখরুল