সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)’র জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে অসংখ্য দেশ রয়েছে, যেগুলো আয়তনে বিশাল হলেও জনসংখ্যায় আমাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের যুবদের সংখ্যাও ইউরোপের অনেক উন্নত রাষ্ট্রের চেয়ে ঢের বেশি। অথচ মাথাপিছু আয়, সেবার মান প্রভৃতিতে বাংলাদেশের চেয়ে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়। মূলত তারুণ্যনির্ভর জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে দুর্বল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এবং প্রশিক্ষণের অভাবকে। আজকের এ বিশাল কর্মক্ষম ও উদ্যমী তরুণ জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার এখনই সময়।
‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে ১১ জুলাই এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, জনসংখ্যাকে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রেখে বিদ্যমান সম্পদের পরিবেশবান্ধব ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জনসংখ্যাকে পরিণত করতে হবে জনসম্পদে। টেকসই উন্নয়নে পরিকল্পিত ও দক্ষ জনসংখ্যার গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি বলেন, পরিকল্পিত ও পরিমিত জনসংখ্যা যেকোনো দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের আয়তন, অবস্থান, জনসংখ্যা, প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ, আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় পরিকল্পিত পরিবার গঠনের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। জাতীয় উন্নয়নে নারীদের অধিক হারে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ ছাড়া জেন্ডার সমতা অর্থাৎ নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, নারী–পুরুষ সমতা এবং নারী ও কন্যাশিশুর অসীম সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে, দেশ এগিয়ে যাবে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরসহ বিভিন্ন জনমিতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো বলে আমি মনে করি। কাঙ্ক্ষিত এই লক্ষ্যার্জনে তিনি সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ৪০ শতাংশ যুবক কোনো ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ গ্রহণ অথবা কর্মের মধ্যে নেই। তারা পড়াশোনা যতটুকু করার করেছেন এবং বসে আছেন। জীবনের কোনো পরিকল্পনা নেই, প্রচেষ্টা নেই কর্ম সুযোগ তৈরি করার। একটাই পরিকল্পনা, একটাই প্রত্যাশা যে কবে চাকরি হবে। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে প্রধান কাজ হলো যতদূর সম্ভব দক্ষ জনগোষ্ঠী বিশ্বের শ্রমবাজারে রপ্তানি করা। যে দেশের জন্য কাজ করতে চাই সে দেশের কর্ম–কৌশল রপ্ত করাতে হবে। যদি জার্মানিতে কাজ করতে চাই তবে ঐ দেশের কর্ম–প্রশিক্ষণ গ্রহণ করাতে হবে। এভাবে প্রতিটি দেশে দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রেরণের কৌশল জানতে হবে, যুবকদের জানাতে হবে এবং বিশ্ববাজারে কোথায় কী কী ধরনের কাজের সুযোগ আছে, তার জন্য কী কী ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তার আলোচনা হতে হবে। এ বিষয়ে কলাম লেখক সুধীর সাহা লিখেছেন, বাংলাদেশের শ্রমশক্তির সবচেয়ে দুর্বল দিক তার দক্ষতার ক্ষেত্র। দক্ষতার ঘাটতি এবং দক্ষতার অমিল উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর মোট শ্রমশক্তির শতাংশ হিসাবে দক্ষ শ্রমিকের অনুপাত চীনে ২৪, আমেরিকায় ৫২, ইংল্যান্ডে ৬৮, জাপানে ৮০ এবং ভারতে মাত্র ৩। বাংলাদেশ সে হিসাবে এখনো শূন্যের কোঠায় অবস্থান করছে। সুতরাং বৈশ্বিক উৎপাদন হতে হলে বাংলাদেশকে প্রথমেই শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত নারী শ্রমশক্তির বিষয়টিও। সেখানে বাংলাদেশকে কাজ করতে হবে অনেক বেশি। নারী শ্রমশক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি এখানে শ্রমশক্তির দক্ষতাও বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জনসংখ্যা এখনো একটি বড় সমস্যা। কেননা এখানকার জনঘনত্বের হার সবচেয়ে বেশি। জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি আমাদের আর্থসামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে বেকারত্ব; দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও অশিক্ষার শিকার হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। একটি দেশে জনসংখ্যা তখনই সম্পদে পরিণত হয়, যখন প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়। কিন্তু এ চাহিদাগুলো পূরণে এখনো বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকল্পনার অভাবে পুরো জনসংখ্যাকে কার্যকর জনসম্পদে পরিণত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, দেখা দিয়েছে বৈষম্য। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে এ ঘাটতিগুলো পূরণ করা অপরিহার্য।