একজন হৃদরোগীর হার্টের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্যের পর এবার ব্রেন টিউমারের এক রোগীর সফল অস্ত্রোপচার (সার্জারি) সম্পন্ন হয়েছে এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রামে। নুরুন্নাহার নামে ওই রোগীর অস্ত্রোপচার গত ২০ মে সম্পন্ন হয়।
নিউরোসার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. আনিসুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে হাসপাতালটির দক্ষ সার্জারি টিম এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে। সফল এ অস্ত্রোপচারের বিষয়টি তুলে ধরতে গতকাল দুপুরে ছোট পরিসরে একটি মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সভায় হাসপাতালের চীফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত, পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. প্রকাশ কুণ্ডুর নারাসিমহাইয়া, মহাব্যবস্থাপক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ ফজল-ই-আকবর চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়া রোগী নুরুন্নাহার বেগমও এতে উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়- ৪২ বছর বয়সী নুরুন্নাহার বিগত ৬ মাস যাবৎ মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগছিলেন। যা ধীরে ধীরে চরম মাত্রায় বাড়তে থাকে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও তেমন ভালো ফল পাননি। সময়ের সাথে সাথে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এক পর্যায়ে অসাড়তায় ভুগতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে ডান হাত ও পায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। হাত-পা অনেকটা অবশ হয়ে পড়ে। সার্জারির কয়েক সপ্তাহ আগে রোগী কথাও বলতে পারছিলেন না। সংকটাপন্ন অবস্থা বিবেচনা করে রোগীর পরিবার ডা. আনিসুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করেন। পর্যবেক্ষণ করে রোগীর ব্রেইনের বাম পাশে বেশ বড় একটি টিউমার দেখতে পান ডা. খান। তিনি সার্জারির মাধ্যমে এ টিউমার অপসারণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা রোগীর পরিবারকে জানান। এ ধরণের অস্ক্রোপচার বেশ জটিল প্রকৃতির উল্লেখ করে ডা. আনিসুল ইসলাম খান বলেন- রোগীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে টিউমারের লক্ষণ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জটিলতা দেখা দেয়ায় কেসটি একটু ব্যতিক্রম ও অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অত্যন্ত জটিল হলেও সার্জারির মাধ্যমে এটি অপসারণ করাই এর উত্তম চিকিৎসা। এ ধরণের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সার্জনের বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়। একই সাথে সার্জারি টিমকেও দক্ষ হতে হয়। শেষ পর্যন্ত আমরা সাফল্যের সাথে এ সার্জারি সম্পন্ন করতে সক্ষম হই। মাথাব্যথা, অসাড়, বমি, খিঁচুনী অনুভব করাসহ আরো কিছু লক্ষণ আছে, যা দ্বারা ব্রেইন টিউমারে আক্রান্তের বিষয়টি বুঝা যায় বলে জানান নিউরোসার্জন ডা. আনিসুল ইসলাম খান।
অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ আছেন বলে জানান নুরুন্নাহার বেগম। তিনি বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের ব্যাপারে আগে শুনে থাকলেও নিজে এসে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা, আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা এবং ডাক্তার-নার্সসহ সকল কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহারে আমি সত্যিই মুগ্ধ। ডা. আনিসুল ইসলাম খান স্যারের সাথে যোগাযোগের পর তার পরামর্শে আমি অপারেশনে সম্মতি জানাই। স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং স্বল্প খরচে আমার সুচিকিৎসা সম্পন্ন হয়। বর্তমানে আমি ভালো আছি এবং আগের চেয়ে অনেক সুস্থ অনুভব করছি। ডা. আনিসুল ইসলাম স্যার এবং এভারকেয়ার হসপিটালের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
প্রসঙ্গত, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই চিকিৎসা সেবা শুরু হয়েছে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামে। বিশ্বমানের স্বাস্থ্য সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৪৭০ শয্যার আন্তর্জাতিক মানের এই হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রামে।
শহরের সন্নিকটে অনন্যা আবাসিক এলাকায় ১৮ তলার দৃষ্টিনন্দন ভবনে গড়ে তোলা হাসপাতালটির গত এপ্রিলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে এর মাঝে পুরোদমেই চালু হয়েছে চিকিৎসা সেবা। এরইমধ্যে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে শুরু করেছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের রোগীরা। চিকিৎসক-নার্সসহ দক্ষ জনবল ও টিম নিয়ে সেবা দিতে প্রস্তুত হাসপাতালও। জটিল অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে এ হাসপাতাল। এর মাঝে চলতি মাসের শুরুতেই একজন হৃদরোগীর হার্টের জটিল অস্ত্রোপচারে (অপারেশন) সাফল্য দেখিয়েছে হাসপাতালটি। এবার ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত এক রোগীর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছে এ হাসপাতাল।
হাসপাতালের চীফ অপারেটিং অফিসার নীলেশ গুপ্ত বলেন- স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি আধুনিক অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামও জরুরি। কারণ, অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছুই করতে পারবেন না। আমরা দক্ষ চিকিৎসকের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সবকিছুই রেখেছি। বিশ্বমানের সেবা দিতেই। ঘরের দুয়ারে যদি বিশ্বমানের সেবা পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসা নিতে আমার-আপনার আর ঢাকা বা ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বেনা।
হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ ফজল-ই-আকবর চৌধুরী জানান- এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রামে রয়েছে বিশ্বমানের মডিউলার অপারেশন থিয়েটার। অত্যাধুনিক অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ, এন্ডোস্কোপ, ক্রানিওটোম ও ড্রিল মেশিন, সি-আর্ম মেশিন। অপারেশন থিয়েটারের পাশেই রয়েছে সকল সুবিধা ও দক্ষ জনবলসহ সার্জিক্যাল আইসিইউ, যা নিউরো সার্জিক্যাল অপারেশন পরবর্তী সময়ের জন্য খুবই জরুরি। ব্রেইনের বিভিন্ন অপারেশন, স্ট্রোক অপারেশন, হেড ইনজুরি, স্পাইন ইনজুরি, স্পাইনাল টিউমার পিএলআইডি, পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারিসহ অন্যান্য নিউরো সার্জিক্যাল সেবা দিতে এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রামবাসীর জন্য বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই এ হাসপাতালের লক্ষ্য জানিয়ে ফজলে-ই-আকবর চৌধুরী বলেন- তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত। চট্টগ্রামের মানুষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর ঢাকা বা বিদেশে ছুটতে হবে না। হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ জানায়- দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা এই হাসপাতালে সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্য সেবা ও পাঁচ শতাধিকেরও বেশি মেডিকেল প্রফেশনালসকে সঙ্গে নিয়ে এ হাসপাতাল সব স্তরের রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করবে। ২৪/৭ জরুরি বিভাগ। সর্বাধুনিক আইসিইউ সেবা এবং ২৭টি বিশেষ ও উপ-বিশেষ বিভাগসহকারে এটি চট্টগ্রামের অন্যতম মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সুপার-স্পেশিয়ালিটি টারশিয়ারি কেয়ার হসপিটাল বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
উল্লেখ্য, এভারকেয়ার হাসপাতাল, এভারকেয়ার গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বেশ কয়টি দেশে ২৯টি হাসপাতাল, ১৬টি ক্লিনিক এবং ৭০-এর বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এভারকেয়ার গ্রুপ। চট্টগ্রামের হাসপাতালটি বাংলাদেশে এভারকেয়ার গ্রুপের ২য় হাসপাতাল। প্রথমটি রাজধানী ঢাকায়।