সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। দিনদুপুরে পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়ালেও হাতের নাগালের বাইরে মামলার আসামিরা। এ অবস্থায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিহত দিয়াজের পরিবার।
দিয়াজের পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হওয়ায় এগোচ্ছে না মামলার তদন্ত। মামলার দুই আসামি জামিনে থাকলেও অন্যরা ঘুরছেন প্রকাশ্যে। অথচ তদন্তকারী সংস্থার আগ্রহ নেই আসামিদের গ্রেপ্তারে। উল্টো আসামিরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পরিবারের। খবর বাংলানিউজের।
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চবির উত্তর ক্যাম্পাসের নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ। এ ঘটনার তিনদিন পর ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা উল্লেখ করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যা বলে শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও তার অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা দাবি করে আসছিল।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল মনসুর জামশেদ, সিনিয়র সহ সভাপতি মনসুর আলম, সহ সভাপতি আবদুল মালেক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, প্রচার সম্পাদক সম্পাদক রাশেদুল আলম জিসান, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও সদস্য আরিফুল হক অপুকে আসামি করা হয়।
জাহেদা আমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে হত্যার আলামত আছে। এর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। ওই সময়ে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিজেই সেটির তদন্ত শুরু করেন। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে।
মামলার বাদি ও দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেন, ছয় বছরে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার উপর প্রভাব খাটানো হচ্ছে। আমি আগেও বলেছি, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ না করা পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। আমি ঘর ভাঙচুরের সময় সব আসামিকে নিজ চোখে দেখেছি। কিন্তু খুনের সময় নিজ চোখে দেখিনি। আমি যাদেরকে আসামি করেছি, এর বাইরেও আসামি আছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়া বলেন, দিয়াজের মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে অগ্রগতিও রয়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।