বিউ ফুল আর কচি আমের ঘ্রাণে চৈত্র সংক্রান্তি স্মৃতিতে বহু দূরে গ্রাম বাংলার মায়েদের ঘরদোর ঝাড়পোঁছের শব্দে হারিয়ে যেতে থাকি। সংক্রান্তির আয়োজন মানে ঘরের একটা শিশি পর্যন্ত স্নান থেকে বাদ যেতো না। গ্রামের হিন্দু নারীরা এই সময়টা কে এতোটাই গুরুত্ব দিতো, গরুর ঘর পর্যন্ত সাদা হয়ে যেতো। ঘরের পোষা প্রাণীরা ও সমান গুরুত্ববহ ছিলো। আজকের দিনে গরু ছাগলের স্নানের পর গলায় ঝুলতো গোলাপি রঙের এক ধরনের ফুলের মালা, নাম টা এখন ভুলে গেছি। দিন পনেরো আগের দিন থেকে শুরু হয়ে যেতো মায়ের ঘর উঠোন পরিষ্কারে কাজ, পাশাপাশি খইয়ের ছাতু, নাড়ু মুড়ি মুড়কি কতো কি বানানোর ধুম লেগে যেতো। এইদিনে ভোর রাতে উঠে যেতাম সবাই, নানার রকম ঔষধিগাছ বাড়ির উঠোনে স্তুপ করে আগুন জ্বালিয়ে দিতো, সারা বাড়ি সাদা ধোঁয়ায় ডুবে যেতো, বউ ঝি রা বসে বসে দেশীয় গীত গাইতো।
এই ধোঁয়ার উপকারে নাকি বিষাক্ত মশা মাছি মারা যায়, বসন্ত রোগ আসে না। আমরা বান্ধবীরা সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে নানান জায়গা থেকে নিম পাতা সহ সবধরনের তেতো পাতা তুলে আনতাম, মায়েরা সিলপাটায় বেটে দিলে সকলে গায়ে মেখে স্নান করতাম। এই সব পাতা গায়ে দেয়ার কারণ হচ্ছে গায়ে যেন কোন খোসপাঁচড়া না ওঠে। স্নানের পর সবাই লেগে যেতো শক্র কাটতে, যে যার মতো মাটিতে মানুষ এঁকে তাকে কাটা হতো। আমার বাবা এই কাজটা খুব মনোযোগ সহকারে করতেন। তারপর মা ঘরে বসানো দই আর গুড় দিয়ে খইয়ের ছাতু মাখতো, বড়ো বড়ো গোল্লা করে সব বাচ্চাদের হাতে দিতো। উফ, খেতে কি ভালো ছিলো।
সকল নারী একসাথে তরকারি কুটতে বসতো, পাছন রান্নার ঘ্রাণে মৌ মৌ করতো সারা দুপুর, এ ঘর ও ঘর থেকে পাচন রান্না তরকারি বাটি চলে আসতো। গ্রামে থাকতে বাবাকে তরকারি বাজার ও করতে হতো না, সকলের বাড়ির সাথে সবজি ক্ষেত, প্রায়ই ৪০ রকমের সবজি দিয়ে পাচন রান্না হতো, যেটা চট্টগ্রামের লোকেরা বলে ঘনট! শহরের থিতু হওয়ার পর থেকে সে চৈত্র সংক্রান্তির সেই মায়াবী ঘ্রাণ আর পাই না।