ছেলেকে ‘আর্লি’ স্কুলে নিয়ে যেতে এসএমএস পেয়েছিলেন মিতু

আরও চারজনের সাক্ষ্য

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

খুনের আগের দিন অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৭ টা থেকে ৮ টার সময় মিতু একটি এসএমএস পেয়েছিলেন। এতে ছেলেকে স্কুলে আর্লি নিয়ে যেতে বলা হয়। এসএমএস পাওয়ার পরপর যা তিনি প্রতিবেশী উম্মে ফরহাদ আহমেদ সুরমাকে বলেছিলেন। সুরমার দুই ছেলেও মিতুর ছেলে মাহির স্কুলে (ক্যান্টনম্যান্ট স্কুল এন্ড কলেজ) পড়ত। একই এসএমএস সুরমাও পেয়েছিলেন কিনা মিতু তাও জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে তিনি বলেন, তার কাছে এরকম কোনো এসএমএস আসে নাই।

গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এসব তথ্য তুলে ধরেন মিতুদের প্রতিবেশী সুরমা। তিনিসহ গতকাল আরও চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা হলেন, সিআইডি খুলনার বিভাগীয় ফরেনসিক ল্যাবের এএসপি ও চট্টগ্রাম সিআইডির তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবদুর রহিম, পাঁচলাইশ থানার তৎকালীন কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া ও ওয়েল ফুডের পাশের ফল দোকানের কর্মচারী আব্দুর রহিম। সুরমার স্বামীর নাম কাজী মো. ইদ্রিস। পাঁচলাইশের ও আর নিজাম রোডের ১ নম্বর রোডের ১ নম্বর ইকুইটি সেন্ট্রিয়াম ভবনের ১৩বি’তে তারা দুই ছেলেসহ থাকতেন। একই ভবনের অপর একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন সাবেক এসপি বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।

সুরমা বলেন, ঐ রাতে মিতু ভাবিসহ চারজন একই বিল্ডিংয়ে থাকা ডা. রফিকুল ইসলামের বাসায় খাওয়াদাওয়া করে রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত ছিলাম। যা জবানবন্দিতেও বলেছি। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সুরমা আরো বলেন, ঘটনার দিন ৫ এপ্রিল পৌনে ৭ টায় আমার স্বামী আমাকে ফোন করে বলে মিতু ভাবি মারা গেছে। তখন আমি স্পট তথা ওয়েল ফুডের সামনে যেতে লিপ্ট করে নিচে নামি। নিচে বাবুল আক্তার ও মিতু ভাবির ছেলে মাহিরের সাথে দেখা হয়। সে কাদঁছিল। এবং বলছিল যে তার মাকে হত্যা করা হয়েছে। মাহিরকে আমি গেইটের ভেতরে দিয়ে আমি স্পটের দিকে যাই। গিয়ে দেখি লাশ, মিতু ভাবি ওয়েল ফুডের সামেন রাস্তায় পড়ে আছে। সিকিউরিটি গার্ড সাত্তারকে আমি একটি চাদর আনতে বলি। চাদর নিয়ে আসলে তা দিয়ে মিতু ভাবির শরীর ডেকে দিই। মিতু ভাবি বোরখা পড়া ছিল উল্লেখ করে সুরমা বলেন, রক্তাক্ত অবস্থা ও মাথায় গুলি চিহ্ন দেখে আমার অনেক খারাপ লাগে। এরপর পুলিশ আসে। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। তাতে আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি স্বাক্ষর করি।

সিআইডি কর্মকর্তা আবদুর রহিম সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার পর আলামত হিসেবে ৭ পয়েন্ট ৬৫ এমএম পিস্তলের দুটি অব্যবহৃত, একটি ব্যবহৃত ও একটি মিস ফায়ার হওয়া কাতুর্জ, স্থানীয়ভাবে তৈরি একটি পয়েন্ট ৩২ ক্যালিবারের রিভলবার পাই। পরে সেগুলো পরীক্ষা করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে জমা দিই।

কনস্টেবল রনিতা বড়ুয়া তার সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল ওয়েল ফুডের সামনে যাই। সেখানে দেখতে পাই কালো বোরকা পরা একটি লাশ পড়ে আছে। এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া লাশের সুরতহাল করেন। তাকে আমি সহযোগিতা করি। তিনি জব্দ তালিকাও প্রস্তুত করেন। ফল দোকানের কর্মচারী আব্দুর রহিম সাক্ষ্যে বলেন, ঘটনার দিন সকালে দোকান খুলতে গিয়ে মানুষের জটলা দেখতে পাই। পুলিশও ছিল। শুনি, একজনকে সন্ত্রাসীরা মেরে চলে গেছে। পরে পুলিশ সেখান থেকে গুলি, খোসা জব্দ করে। জব্দ তালিকায় আমাকে স্বাক্ষর করতে বললে আমি স্বাক্ষর করি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেশব নাথ আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, চারজন সাক্ষীকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরাও করেছেন। আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। মিতু খুনের মামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে ভিটাবাড়ির জন্য জীবন গেল, সেখানেই কবর হলো হাসানের
পরবর্তী নিবন্ধশ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেককে স্মরণ