ছিনতাইকারীকে চিনে ফেলায় শ্বাসরোধে খুন

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

আমি আর আপনি একই গ্যারেজে রিকশা রাখি, আমাকে চিনতে পারছেন? আমাকে ছেড়ে দেন। ছিনতাইকারীকে চিনতে পেরে এ কথা বলেছিলেন ব্যাটারি রিকশাচালক সোলাইমান। আর তাতেই প্রাণ হারাতে হলো তাকে। সীতাকুণ্ডে হাতপা বাঁধা এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে ৫ জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের দেয়া জবানবন্দীতে উঠে আসে হত্যার উদ্দেশ্য। এর আগে নিহতের মা সাহেদা বেগম বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৫ এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়। গতকাল আসামিরা চট্টগ্রামে পৃথক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ৩০ জুলাই সকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পারি, সোনাইছড়ি ইউপিস্থ বারআউলিয়া সাকিন মাজার সংলগ্ন ব্রিজের দক্ষিণ দিকে মহাসড়কের পাশে একটি হাত, পা বাঁধা লাশ পড়ে আছে। এরপর ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করি। আকবর শাহ থানার ১ আগস্ট একটি অটোরিকশা চালকের মা মিসিং ডায়েরি করতে গেলে তাকে সীতাকুণ্ড থানায় নিয়ে আসি। তিনি থানায় এসে ওই লাশটি সোলাইমানের (২২) বলে শনাক্ত করেন। তাদের স্থায়ী বাড়ি গাইবান্ধা হলেও তারা বর্তমানে আকবর শাহ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। ওসি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তিতে জানতে পারি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য অটোরিকশাসহ সোলাইমানকে অপহরণ করে সীতাকুণ্ড থানা এলাকায় নিয়ে এসে ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যা করেছে। গত সোমবার আকবর শাহ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা হলেন আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনির মো. কামাল হোসেনের পুত্র মো. শাহাদাৎ হোসেন (২০), রবিউল হোসেনের পুত্র মো. শেখ ফরিদ (২০), মৃত আব্দুল হকের পুত্র মো. তানভীর হাসান (২১), আসাদুল ইসলামের পুত্র মো. জাহিদুল ইসলাম (২০), মো. শরিফুল আলমের পুত্র মো. শাহীন আলম (১৭)

ওসি আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, শাহাদাত ও ফরিদের নেতৃত্বে ৭ জন একটি অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন রাত ১১টার পর কর্নেলহাট থেকে সোলাইমানের অটোরিকশা ভাটিয়ারী যাবে বলে ৩০০ টাকা ভাড়ায় চুক্তি করে। তানভীর, শাহিন, জাহিদুল অটোরিকশা যোগে ভাটিয়ারীর উদ্দেশে রওনা দেয়। অন্যদিকে পরিকল্পনা মতে ফরিদ একটি কাভার্ডভ্যানে করে অটোরিকশার আগে ভাটিয়ারীর উদ্দেশ্য রওনা হয়। সীতাকুণ্ডের বিএম গেটে শাহীন ও তানভীর সোলাইমানের কাছ থেকে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং তার হাতপা বেঁধে কাভার্ডভ্যানে উঠিয়ে দেয়। পরে তারা বাঁশবাড়িয়া কোট্টা বাজার গিয়ে কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশা উঠানোর সময় বাজারের কর্তব্যরত নাইট গার্ড এসে যাওয়ায় অটোরিকশা ফেলে আসামিরা কাভার্ডভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু সোলাইমান আসামি ফরিদকে চিনে ফেলে বলেন, আমি আর আপনি একই গ্যারেজে রিকশা রাখি, আমাকে চিনতে পারছেন। আমাকে ছেড়ে দেন। তখন আসামিরা সোলাইমানকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় এবং কাভার্ডভ্যানের ভিতর বেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে তার লাশ ব্রিজের কাছে ফেলে পালিয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ জমিসহ ঘর পাচ্ছেন আরো ২৪৪টি পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা মেয়রের