ছায়েরা খাতুনের বিভীষিকাময় এক রাত

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। সেদিন রাতে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নেয় চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উপকূলের লাখো মানুষের প্রাণ। তবে এই কঠিন অবস্থা থেকেও কিছু মানুষ বেঁচে ফিরেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে। এমনই একজন সন্দ্বীপের ছায়েরা খাতুন। এক আলাপে তিনি দৈনিক আজাদীকে জানান বিভীষিকাময় সেই রাতের কিছু অভিজ্ঞতা। পেতে থাকে। সন্ধ্যায় গড়িয়ে ঘড়িতে সময় যত বাড়তে থাকে, বাতাসের সেই বেগও বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে বাতাসের চাপে উপড়ে যায় ছায়েরা খাতুনের বসতঘর। এরপর বাতাসের সাথে ১২২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রায় ১০০ হাত দূরে।

এর আগে দিনে আবহাওয়া খারাপ দেখে চার মেয়ে ও স্বামীকে পাঠিয়ে দেন পার্শ্ববর্তী বশিরিয়া মাদ্রাসায়। নিজে আঁকড়ে থেকেছেন হরিশপুর বেড়িবাঁধের উপর বসতঘরে। অবশ্য এটা নিজের জায়গাও ছিল না। বারবার নদী ভাঙ্গনের কারণে এক জায়গায় থেকে স্থানান্তর হয়ে আরেক জায়গায় ঠাই খুজে নেয়া। সন্দ্বীপ হাই স্কুলের কাছাকাছি বেড়িবাঁধের উপর ছিল তার ঘরটি।

বাতাসের তীব্রতা ও জলোচ্ছ্বাসের স্রোত কমলে ছায়েরা খাতুন নিজেকে আবিষ্কার করেন বসতঘর থেকে দূরে কলমি গাছের মধ্যে। চিরচেনা গাছগুলো আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। ছায়েরা খাতুন জানান, জোয়ারের পানি লবণাক্ত থাকায় কিছুটা গরম ছিল। তবে উপর থেকে বৃষ্টির পানি গায়ে সুইয়ের মতো বিঁধছিল।

তিনি জানান, শেষরাতের দিকে বাসাতের গতিবেগ ও জোয়ারের মাত্রা যখন আরও কমতে থাকে তখন তিনি দেখেন, একজন লোক টর্চের আলোয় কাকে যেন খুঁজছে। তার কাছে আসতেই তিনি বুঝতে পারেন এটি তার চাচাতো দেবর। দেবর এসেছে তার বাবাকে খুঁজতে। জোয়ারের তীব্রতায় তার বৃদ্ধ বাবা ঘরের বারান্দা থেকে গরুসহ ভেসে যায়।

ছায়েরা খাতুন বলেন, তখন আমার শরীরে কোনো কাপড় ছিলো না। আমি পুরো শরীর পানিতে ডুবিয়ে রেখে শুধু মাথাটা তুলে রেখেছিলাম। আমার দেবর কাছে এসে আমাকে দেখে বলেছিল ভাবী আমার হাত ধরে উঠে আসেন। তখন আমি দেবরকে বলি, ভাই আমার শরীরে কোনো কাপড় নেই। তুমি আমার কাছে এসে না। এরপর দেবর খুঁজে এনে একটি শাড়ি আমাকে দেয়। আমি দ্রুত সেটি শরীরে জড়িয়ে নিকটবর্তী বশিরিয়া মাদ্রাসায় চলে যাই। মায়ের বেঁচে ফিরে আসার সংবাদ শুনে মেয়েরা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যায় মাদ্রাসার আশ্রয়কেন্দ্রে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রতি ঈদে তার আয় ১০-১২ লাখ টাকা!
পরবর্তী নিবন্ধস্বজন হারানোর কান্না শোনা যায় এখনো