হিমালয়ের দেশ নেপাল। এই হিমালয় কত জন যে অতিক্রম করেছে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু বুধবার রাতে রাজা দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা যা করে দেখাল তাতো হিমালয় অতিক্রমের চাইতেও অনেক বেশি। এ যেন হিমালয় টপকে আকাশ ছোঁয়ার মতো ব্যাপার। যে দেশের নারী ফুটবল এতটাই অবহেলিত যে, দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশ নিতে যাওয়ার আগে নাম মাত্র দেওয়া বেতনও রয়েছে তিন মাসের বাকি। প্রস্তুতিতে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে নেপালে গিয়ে রীতিমতো হিমালয়ের চাইতেও উঁচু পর্বত পাড়ি দিল সাবিনা–রুপনা–মনিকা–ঋতু পর্না চাকমারা। এক সময় যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের একক আধিপত্য ছিল সে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সোনালী ট্রফিটা টানা দুইবার জিতল বাংলার নারীরা।
দক্ষিণ এশিয়ার সব পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে আরো একবার জাহির করল বাংলার নারী ফুটবলাররা। অথচ এই নারী ফুটবলাররা কখনোই থাকে না পাদ প্রদীপের আলোয়। তাদের পেছনে থাকে না অর্থের ছড়াছড়ি। তাদের জন্য হয় না নিয়মিত লিগ আয়োজন। ক্যামেরার ফ্ল্যাশও জ্বল জ্বল করে না তাদের সামনে। অথচ নীরবে নিভৃত্তে তারা দেশের জন্য সবচাইতে সেরা সাফল্যটা এনে দেয় বারবার। এমন একটি দলকে দেশের মাটিতে স্বাগত জানানোটা যেন দেশের ফুটবল ভক্তদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলতে নামার আগে নারী ফুটবলাররা আবদার করেছিলেন তারা যদি চ্যাম্পিয়ন তাহলে যেন দেশে ফিরলে একটি ছাদ খোলা বাসে করে ঘুরানো হয়। সেবার তাদের সে আবদার পূরণ করা হয়েছিল। তবে এবারে আর আবদার করতে হয়নি। রাতারাতি তৈরি হয়ে যায় ছাদ খোলা বাস। যেখানে করে বিমান বন্দর থেকে নারী ফুটবলারদের নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে।
ছাদ খোলা বাসে করে চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে প্যারেড করার রীতি আসলে আমাদের দেশে নেই। ইউরোপ কিংবা অন্য কোন দেশের জন্য সেটা নিয়মিত দৃশ্য। তবে নারী ফুটবলারদের নিয়ে এই সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে বাংলাদেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় চ্যাম্পিয়ন নারীদের বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। সেখানে বাফুফে কর্মকর্তারা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। বিমান বন্দরের আশে পাশে বিপুল সংখ্যক ফুটবল ভক্ত জড়ো হয় চ্যাম্পিয়নদের শুভেচ্ছা জানাতে। বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বিকাল ৪টার দিকে তারা ছাদ খোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ স্লোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা। পথে পথে উৎসুক জনতা ফুল ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানায় ফুটবলারদের। মানুষের ভীড়ের কারনে অতি ধীরে চলতে হয় ফুটবলারদের বহনকারী ছাদ খোলা বাসটিকে। আশে পাশের দালান থেকেও নারী পুরুষ নির্বিশেষে ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানায় নারী ফুটবলারদের। অনেকেই নিচে থেকে ছবি তোলেন ফুটবলারদের সাথে। আর ফুটবলাররাও হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। বিকেল সাড়ে ৪টায় বিমাবন্দর থেকে বের হওয়া বাসটি রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ভবনে প্রবেশ করে। সেখানে ক্রীড়া উপদেষ্টা নারী ফুটবলারদের বরণ করে নেন।
সংক্ষিপ্ত সে অনুষ্ঠানে ক্রীড়া উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলারদের এক কোটি টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেন। একই সাথে তিনি জানান চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের দাওয়াত দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আগামীকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনে সাফ জয়ী নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে।