একেই বলে মধুর প্রতিশোধ। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে অনেক নাটকের পর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল ইংল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ টাই। পরে সুপার ওভারেও টাই। বেশি চার মারার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। সে বেদনা যেন গত চার বছর ধরে খুড়ে খুড়ে খাচ্ছিল কিউইদের। প্রতিশোধ নেওয়ার যেন সুযোগ খুঁজছিল নিউজিল্যান্ড। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই কিউইদের সামনে আসে সে সুযোগ। আর সে সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে মধুর প্রতিশোধ তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে যেন উড়িয়ে দিল রানার্স আপরা। চ্যাম্পিয়নদের লজ্জায় ডুবিয়ে একেবারে উড়ন্ত সূচনা রানার্স আপদের। ইংলিশ বোলারদের যেন একেবারে অলি গলির বোলারে পরিণত করলেন কিউই ব্যাটাররা।
বিশেষ করে ডেভন কনওয়ে এবং রাচিন রবীন্দ্র। বলা যায় এ দুজন বেধড়ক পেটালেন ইংলিশ বোলারদের। আর তাতেই ৯ উইকেটের বিশাল জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করল নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ের জোড়া সেঞ্চুরিতে এই বিশাল জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ইংলিশ ব্যাটাররা ভালোই করেছিল। কিন্তু কে জানতো তাদের সে রানকে একেবারে মামুলি বানিয়ে ছাড়বেন রবীন্দ্র এবং কনওয়ে। অনেকেই এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিটের তালিকায় রাখেনি নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই তারা যেন জানিয়ে দিল তারাও ফেবারিটের তকমা নিয়ে এসেছে। আর সেভাবেই যেন তারা শুরুটা করল। বলা যায় চ্যাম্পিয়নদের একেবারে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনল।
২৮৩ রানের লক্ষ্যটাকে যেন মনে হচ্ছিল একশ কিংবা দেড়শর মতো। কারেন, ওকস, উড়, মঈন, আদিল। কি স্পিন, কি পেস কাউকেই যেন তোয়াক্কা করলেন না রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে। খোদ ইংলিশরাও হয়তো ভাবেনি এতটা নাস্তা নাবুদ করে ছাড়বে তাদের। আর এটাই ক্রিকেটের আসল চরিত্র। যেটা গতকাল দেখাল নিউজিল্যান্ড আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে। ৮২ বল বাকি রেখে ম্যাচ শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড। যা বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আগে কখনোই হয়নি।
টস জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। শুরুটা খারাপ ছিল না ইংলিশদের। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ বলে ৪০ রান তোলেন দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো আর ডেভিড মালান। ২৪ বলে ১৪ করা মালানকে উইকেট রক্ষকের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ম্যাট হেনরি। জো রুটের সাথে জুটি বেধে ২৪ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি বেয়ারস্টো। ৩৫ বলে ৩৩ রান করে মিচেল স্যান্টনারের ঘূর্ণিতে থামতে হয়েছে তাকেও। হ্যারি ব্রুক শুরু করেছিলেন ঝড়ের গতিতে। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। রাচিন রাবিন্দ্রর যে ওভারে আউট হয়েছেন তার আগের তিন বলে দুটি বাউন্ডারি আর একটি ছক্কা হাঁকান এই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ১৬ বলে ৪টি চার আর একটি ছক্কার সাহায্যে ২৫ রান করে ফিরেন ব্রুক। ৯৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ডের স্পিন আক্রমণে আত্মসমর্পণ করেছেন মঈন আলিও। ১৭ বলে ১১ রান করে গ্লেন ফিলিপসকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন এই অলরাউন্ডার। ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে ইংলিশরা। তবে জো রুট সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটিও এসেছে ইংলিশ এই ব্যাটারের হাত ধরে।
অধিনায়ক জস বাটলার এসে ৭০ রান যোগ করেন রুটের সাথে। ৪২ বলে ৪৩ রান করা বাটলারকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন হেনরী। এরপর দলকে ২২৯ রানে পৌঁছে দিয়ে ফিরেন জো রুট। ফেরার আগে ৮৬ বলে ৪টি চার আর একটি ছক্কার সাহায্যে ৭৭ রান করে গ্লেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হন রুট। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ সেঞ্চুরি। তবে ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ২৮২ রানে যেতে পেরেছে সেটা দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের কল্যাণে। লিভিংস্টোন, স্যাম কারান, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ আর মার্ক উড সবাই কম বেশি অবদান রেখেছেন দলের ইনিংসে। যেখানে লিভিংস্টোন ২০, স্যাম কারান ১৪, ওকস ১১, আদিল রশিদ ১৫ আর মার্ক উড করেন ১৩ রান। নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি ৪৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্যান্টনার আর গ্লেন ফিলিপস।
২৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেন ওপেনার উইল ইয়ং। রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ডেভন কনওয়ে এবং রাচিন রবীন্দ্র। ক্যারিয়ারের আগের ১৩ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ব্যাট করেছেন রাচিন রবীন্দ্র। যেখানে ৬ বার নেমেছেন সাত নাম্বারে আর দুইবার নেমেছেন ছয় নাম্বারে। গতকাল প্রথমবারের মতো তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন রবীন্দ্র। কিন্তু কে জানতো এই সুযোগটাকে এই তরুণ এতটাই কাজে লাগাবেন। সেই যে ১০ রানের মাথায় একটি উইকেট নিতে পেরেছিল ইংলিশ বোলাররা। এরপর কেবলই হতাশা আর হতাশা ছিল তাদের জন্য। কারণ রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে এরপর কেবলই মাঠে দৌড়ে ছেড়েছেন ইংলিশ ফিল্ডারদের। যদিও খুব বেশি দৌঁড়তে হয়নি তাদের। কারণ ইনিংসে ৩০টি চার এবং ৮টি ছক্কা মেরেছেন এই দুই কিউই ব্যাটার। সেই এক রকম শূন্য থেকে শুরু করে দলকে বিজয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন দুজন মিলে। গড়েছেন ২৭৩ রানের জুটি। যা নিউজ্যিলান্ডের পক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। সেরাটা প্রথম উইকেটে জেমস মার্শাল এবং ব্রেন্ডন ম্যাকাকলামের গড়া ২৭৪ রানের। এক রানের জন্য সেটাকে টপকাতে পারলেন না রাচিন রবীন্দ্র এবং ডেভন কনওয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রাচিন রবীন্দ্র। আর পঞ্চম সেঞ্চুরি কনওয়ের। যেখানে গতকালের করা ১৫২ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা। ১২১ বলে ১৯টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ১৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন ডেভন কনওয়ে। আর ৯৬ বলে ১১টি চার এবং ৫টি ছক্কার সাহায্যে ১২৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাচিন রবীন্দ্র। ৩৬.২ ওভারে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন দুজন।