আনোয়ারায় এবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে বাধার মুখে পড়ল জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম। রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় বিশেষ সভার মাধ্যমে এনআইডি আবেদন অনুমোদনের বিধান রয়েছে। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত সভায় ১৭৬ আবেদন উত্থাপিত হলেও ৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত না থাকায় অন্তত ১২০ আবেদনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। আবেদনকারীদের বেশিরভাগই প্রবাসী হওয়ায় তারা ক্ষতির আশংকায় রয়েছে।
সূত্র জানায়, উত্থাপিত আবেদনের বেশিরভাগই ছিল প্রবাসীদের। এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধারা দেশে এসে সোনার হরিণ জাতীয় পরিচয়পত্রের আশায় সব ডকুমেন্ট জমা দিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তাদের আবেদন অনুমোদিত না হওয়ায় অনেককেই উপজেলা পরিষদে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন, ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনের কারণে দীর্ঘদিন নতুন ভোটার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে মূলত ঝামেলায় পড়েন প্রবাসীরা। এছাড়া নতুন পাসপোর্ট তৈরির প্রয়োজন ও চাকরির আবেদনের জন্য অনেকে এনআইডির আবেদন করেছিলেন।
জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী
রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ঠেকাতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলায় ‘বিশেষ সভা’ কার্যক্রম চালু করা হয়। চট্টগ্রামের ৭টি উপজেলার মধ্যে রয়েছে আনোয়ারার নামও। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে থানার ওসি, ডিএসবি, এনএসআই কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সদস্য করে ‘বিশেষ সভা’ গঠন করা হয়েছে। প্রতি ১৫দিন পর পর এই ‘বিশেষ সভা’ আহ্বান করে নতুন এনআইডি আবেদনপত্র যাচাই–বাছাই করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক ইমনের সভাপতিত্বে এই সভায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাচন অফিসার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সভায় ছিলেন না উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ১০ চেয়ারম্যানই। বটতলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হাজির হয়েছেন। চাতরী ইউপি ও পরৈকোড়া থেকে আসেন ইউপি সচিব। বৈরাগ, বারশত, রায়পুর, বরুমচড়া, বারখাইন, আনোয়ারা, হাইলধর ও জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা না আসায় তাদের এলাকার আবেদনগুলো আলোচনাতেই আনা যায়নি। তবে বটতলী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান, চাতরী ইউপি ও পরৈকোড়া ইউপি সচিব উপস্থিত থাকায় তাদের এলাকার আবেদনগুলো নিস্পত্তি হয়েছে।
চেয়ারম্যান বা তাদের প্রতিনিধি না থাকায় ৮ ইউনিয়নের ১২০ টির বেশি আবেদনকারী ভোটার হওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। এতে করে আবেদনকারী অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
গত ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মধ্যে ৯জন চেয়ারম্যান উপজেলা সমন্বয় সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। নিরাপত্তার অজুহাতে ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা, সাধারণ সভা, আইনশৃঙ্খলা সভায় যাচ্ছেন না। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপি চেয়ারম্যানরা ইসির ‘বিশেষ সভা’য় অনুপস্থিত থাকায় ভোটার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলো।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার আবু জাফর ছালেহ জানান, উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ১৭৬টি নতুন ভোটার আবেদন ছিল, তার মধ্যে অধিকাংশ প্রবাসী। বিশেষ সভায় ইউপি চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় ৮ ইউনিয়নের ১২০ টির বেশি আবেদনকারীর নতুন ভোটার আবেদন যাচাই–বাছাই করা সম্ভব হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সভা আহ্বান করার সাথে সাথে চেয়ারম্যানদের চিঠি দিয়ে সভার সময়সূচি জানানো হয়। তিনি আরো বলেন, এক প্যানেল চেয়ারম্যান ও দুই ইউপি সচিব সভায় উপস্থিত হওয়ায় ৩ ইউনিয়নের ভোটার আবেদন যাচাই বাছাইয়ের পর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, সভায় যেসব ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়েছেন সেই এলাকার আবেদনগুলো যাছাই বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকীগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।