বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের এক অবিসংবাদিত নাম চে গুয়েভারা। মার্কসবাদী, চিকিৎসক, লেখক, গেরিলা নেতা ও কিউবা বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর খ্যাতি দুনিয়াজোড়া। কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো সহযোগে গেরিলা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে কিউবায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন, লাতিন আমেরিকার মানুষদের দেখিয়েছেন নতুন দিনের স্বপ্ন। চে’র পুরো নাম এর্নেস্তো গেবারা দেলা সেরনা। জন্ম ১৯২৮ সালের ১৪ই জুন লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায়। পেশায় তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক। ১৯৫৩ সালে তিনি বুয়েনস আয়ারস মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর রক্তে ছিল বিপ্লবের অদম্য নেশা, চোখে স্বপ্ন লাতিন আমেরিকাকে সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করার। চে’র আদর্শ ছিল চিলির বামপন্থী কবি পাবলো নেরুদা। সমাজতন্ত্রের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য তিনি লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যান। ১৯৫৪ সালে মেক্সিকোয় তাঁর পরিচয় হয় বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে। এ সময় তিনি যোগ দেন কাস্ত্রোর বিপ্লবী দলে। কিউবার রাজধানী হাভানা দখলের লড়াইয়ে চে কাস্ত্রোর দলের সদস্য হয়ে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে বাতিস্তার পরাজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকার অবলুপ্ত হলে কাস্ত্রো সরকার গঠন করেন। এ সময় চে শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে অর্থনীতি ও কৃষির সমাজতন্ত্রীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। কিন্তু মন্ত্রীত্ব কিংবা শান্তিপূর্ণ শাসনকাজ তাঁকে স্থিরতা দেয় না। মন্ত্রীত্ব ছেড়ে, কিউবা ছেড়ে লাতিন আমেরিকার অন্য ভূ-খণ্ডে চলে আসেন চে এবং আত্মগোপনে থেকে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। ১৯৬৫ সালের পর তাঁকে আর জনসমক্ষে দেখা যায় নি। ১৯৬৭ সালে বলিভিয়ার এক জঙ্গলে বিপ্লবী গেরিলা বাহিনি সহ চে বলিভীয় সেনাবাহিনির হাতে ধরা পড়েন। সে বছরই ৯ অক্টোবর এই মহান বিপ্লবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পর কেটে নেওয়া হয়েছিল তাঁর হাত দুটো। সামরিক সরকার তাঁর লাশও সরিয়ে ফেলে অজ্ঞাত স্থানে। ১৯৯৭ সালে কিউবা ও আর্জেন্টিনার বিশেষজ্ঞরা সম্মিলিতভাবে উদ্ধার করে হাত বিহীন চে-র বহু আকাঙ্খিত কঙ্কাল। কিউবানরা সেদিন কেঁদেছিল অঝোর ধারায়। চে গুয়েভারা রচিত দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গেরিলা ওয়ারফেয়ার’, এবং ‘গেরিলা ওয়ার ফেয়ার: এ মেথড’। তাঁর সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ যুগ যুগ ধরে বিশ্বের বিপ্লবী তরুণ সমাজকে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখায়। মৃত্যুতেই তাই চে নিঃশ্বেষ নন।