সরকারি বা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন না, লাখ টাকা পুঁজির ব্যবসাও নেই তার। অথচ দিব্যি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে অনায়েসে দিন পার করে দিচ্ছেন তিনি মাত্র একটি চুম্বকের সাহায্যে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি একটি মাত্র চুম্বকের আয়ে চলে এক অন্ধের সংসার। বলছিলাম মুন্সি মিয়ার কথা। গাছ তলায় বসে এখন দশ তলার স্বপ্নও দেখেন না তিনি। জীবনের বাকিটা সময় এভাবেই সুখে শান্তিতে কাটিয়ে দিতে চান।
মুন্সির কাছে থাকে একটি চুম্বক। চুম্বকটি রসির সাথে ঝুলানো থাকে। আর এই চুম্বকের সাহায্যে তিনি রাস্তার পাশ থেকে লোহা, পেরাগ ইত্যাদি কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালান। মূলত লোহাভর্তি টলি থেকে যে টুকটাক লোহা বা পেরাগের খন্ড রাস্তায় পড়ে, সেগুলোই চুম্বকের সাহায্যে মুন্সির থলিতে আসে। আর তাইতো পরম যত্নে বিগত তিন বছর যাবত এই চুম্বকটি মায়ায় আগলে রেখেছেন তিনি। মুন্সি মিয়া বলেন, এই চুম্বকটি আমার সন্তানের মত। আজ তিন বছর যাবত তাকে আমি আগলে রেখেছি। আমার ব্যবসা বলেন, চাকরি বলেন, সবই এই চুম্বক। চোখের সমস্যার কারণে অন্য কোন কাজ করতে পারি না। ফলে দিশা না পেয়ে এই কাজের সাথে জড়িত হই। তিন বছর আগে চোখের চিকিৎসা করাই, তবুও ভালোভাবে দেখতে পাই না।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে লোহা সংগ্রহ করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মুন্সি মিয়া। পরে এসব লোহা এলাকার ভাঙ্গারির দোকানগুলোতে কেজি হিসেবে বিক্রি করেন। তবে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, এই ব্যবসায় প্রতিদিন প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত হাঁটতে হয় তাকে। চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী হয়ে আকবরশাহ, পতেঙ্গা ঘুরে আবার পাহাড়তলীতে ফিরে আসেন। পাহাড়তলীর স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, আমি প্রায় সময় মুন্সি মিয়াকে দেখি। তিনি চোখে দেখতে পান না। তবুও ভিক্ষা না করে তিনি সংসার চালান। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে আমি অবাক হই, লোহা বিক্রি করে আমি শুনেছি মাত্র ২০০–৩০০ টাকা পায়, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর।
চুম্বকের সাহায্যে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ কেজি লোহা সংগ্রহ করেন মুন্সি মিয়া। আর এসব লোহা কেজি হিসেবে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এভাবেই গড়ে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ টাকা আয় হয় তার। মুন্সি মিয়ার বয়স ৫৫ বছর। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়ায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। নিজ কর্মের প্রতি কোন আক্ষেপ বা অভিযোগ নেই মুন্সি মিয়ার।