চীনের বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাং

লিটন কুমার চৌধুরী | বুধবার , ৫ জুন, ২০২৪ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আজ যার কথা জানব,তিনি হচ্ছেন চীনের বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাং । হিনান প্রদেশে হিউয়েন সাং এর আবাসস্থল হিউয়েন সাঙ্‌ লুজহু প্রদেশের ( বর্তমান হিনান প্রদেশ) গৌসি টাউনের চিনহি গ্রামে ৬০২ খিষ্ট্রাব্দে জন্মগ্রহন করেন । তাদের পরিবার ছিল সম্ভ্রান্ত ও উচ্চশিক্ষিত । তার পূর্বপুরুষ চেন শি ছিলেন হান সম্রাজ্যের একজন মন্ত্রী । তার দাদার বাবা চেন কিন পূর্ব ওয়েই সম্রাজ্যের শেনডেং প্রদেশের একজন বড় কর্মকর্তা ছিলেন । দাদা চেন কাং ছিলেন উত্তোর কি সম্রাজ্যের রাজকীয় একাডেমির অধ্যাপক এবং বাবা চেন হুই শুই সম্রাজ্যের একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছেন । বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত তার জীবনী থেকে পাওয়া যায় যে, হিউয়েন সাং ছোটবেলা থেকেই কনফুসিয়াসের গতানুগতিক তত্ত্বের উপর ব্যাপক আগ্রহ ও পারদর্শিতা প্রদর্শন করতেন যা রীতিমত তার বাবাকে অবাক করে দেয় । তার ভাইবোনদের মতো হিউয়েন সাং তাদের বাবার থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা দীক্ষা লাভ করেন । যদিও পরিবার কনফুসিয়াস গতানুগতিক তত্ত্বের উপর বিশ্বাসী তারপরও তিনি বড়ভাই চেন সু এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । ৬১১ খ্রিষ্ট্রাব্দে বাবার মৃত্যু হলে হিউয়েন সাং লুয়াং প্রদেশে জিংতু বুদ্ধ আশ্রমে তার বড়ভাইয়ের সাথে পাঁচ বছর কাটান। সেই বুদ্ধ আশ্রমে থেকে সেই সময় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের সন্ধানে সমগ্র চীন ভ্রমন করেন । অবশেষে তিনি তাং সম্রাট তাইজং শাসনাধীন চ্যাংগান পৌছান । এখানে এসেই হিউয়েন সাং এর ভারতবর্ষ ভ্রমনের অভিপ্রায় জাগ্রত হয়। ফাহিয়েনের ভারত ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন এবং তিনিও চীনে পৌছানো বৌদ্ধধর্ম শাস্ত্রের অসম্পূর্ণতা এবং ভুল ব্যাখ্যা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন।

৬২৯ খ্রিস্টাব্দে চীন থেকে যাত্রা শুরু করে হিউয়েন সাং উত্তরের বানিজ্য পথ ধরে মধ্য এশিয়া কুচ হয়ে উত্তর ভারতে পৌছান ।

বনৌজ নগরে পৌঁছে তিনি মহান ভারতীয় সম্রাট হর্ষবর্ধনের আতিথ্য লাভ করেন।তিনি মগধের বিভিন্ন বুদ্ধ তীর্থস্থান পরিদর্শন করেন। জীবনের অনেকগুলো বছর তিনি ভারত বর্ষে কাটিয়েছিলেন। তিনি এদেশের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন অনেকদিন এবং মিশেছেন বৌদ্ধ জ্ঞানীদের সাথে। তারপর দক্ষিণ এবং পশ্চিম ভারত ভ্রমণ করে পুনরায় মধ্যএশিয়া হয়ে পুনরায় জন্মস্থান চীনে প্রত্যাবর্তন করেন। যাবার সময়ে সাথে করে নিয়ে যান বৌদ্ধধর্মের উপর লিখিত মূল্যবান ও প্রাচীন গ্রন্থরাজি। আরও নিয়ে যান ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক বহু তথ্য। হিউয়েন সাং তার ভ্রমনকৃত সব দেশের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তিনি তার লেখায় শ্রীলংকার তথ্য লিপিবদ্ধ করলেও তিনি এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি ভ্রমণ করেননি।

৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাং চীনে প্রত্যাবর্তন করলে তাকে বিপুল সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। তখনও সিংহাসনে আসীন তাইজং তাকে বিভিন্ন উচ্চ পদে যোগদানের প্রস্তাব দেন। কিন্তু সব প্রস্তাবই তিনি ফিরিয়ে দেন বরং ৬৬৪ খিষ্ট্রাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ রচনায় তার সামর্থ্য ব্যয় করেন। কথিত আছে ফিরে যাওয়ার সময় ভারতবর্ষ থেকে ৬৫৭ ধরনের ৫২০ বাঙ বই সংগ্রহ করে চীনে নিয়ে যান।

হিউয়েন সাং এর গ্রন্থ জিউ জি ( সি, , বি ) মধ্য ও দক্ষিন এশিয়ার দেশসমুহের উপর সর্ববৃহৎ ও তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ। একজন চৈনিক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী কর্তৃক প্রণীত গ্রন্থটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ছিল অত্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলায় ভ্রমণকৃত বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ছিল প্রধানত কর্ণসুবর্ণের নিকটবর্তী রক্তমৃত্তিকা,পুন্ডনগর এর সংলগ্ন এলাকা,সমতট ও তাম্রলিপি। তার বিবরণ বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে ব্যাপক সহায়তা করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপুর দিদি দুর্গা হয়ে
পরবর্তী নিবন্ধতাসমিয়ার শখ