আমেরিকার নতুন শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ব্যতিক্রম থাকবে চীন। অন্য দেশগুলোকে উচ্চহারের শুল্ক থেকে অপাতত স্বস্তি দিলেও চীনের উপর শুল্ক আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। তার ঘোষণা অনুযায়ী, চীনের পণ্যে শুল্ক বেড়ে দাঁড়াল ১২৫ শতাংশে। এ শুল্ক তাৎক্ষণিকভাবেই কার্যকর হবে। অন্যান্য দেশে ট্রাম্পের উচ্চহারের শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার মানে হচ্ছে, সেই দেশগুলোর পণ্যে এখন সার্বজনীন ভাবে প্রাথমিক ১০ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকবে। হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট একথা জানিয়েছেন।
আমেরিকার বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর সমপ্রতি ‘পারস্পরিক শুল্কে’র কথা ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস থেকে গত সপ্তাহেই জানানো হয়, এই শুল্কনীতির বিষয়ে অনেক দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি ঘিরে আমেরিকার ভিতরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। গত সপ্তাহে আমেরিকায় ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে ব্যাপক পরিসরে আন্দোলন হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি–সহ আমেরিকার সব বড় শহরে মার্কিন জনতা ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল তার শুল্কনীতিও।
গতকাল বুধবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘চীন বিশ্বের বাজারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধার যে ঘাটতি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ ধার্য করছি। এটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে চীন ও অন্যান্য দেশ উপলব্ধি করতে পারবে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দিন আর থাকবে না বা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ ট্রাম্প লিখেছেন, ‘প্রকৃত অবস্থার ভিত্তিতে ৭৫টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব প্রতিনিধির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ, অর্থ বিভাগ ও ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) রয়েছে। দেশগুলো বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও অশুল্ক বাধাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে সমঝোতা আলোচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।’ এ পরিপ্রেক্ষিতে চীন বাদে অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘আমি ৯০ দিনের জন্য পাল্টা শুল্ক স্থগিত অনুমোদন করেছি। একই সঙ্গে এই সময়ের জন্য পাল্টা শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। এটাও অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামপ্রতিক শুল্কনীতিতে অন্য দেশগুলি যেমন প্রভাবিত হয়েছে, তেমন প্রভাব পড়েছে সেদেশেও। আমেরিকার শেয়ার বাজারে এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের আবহে ওয়াল স্ট্রিটের টালমাটাল পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি শুল্কনীতির জন্য আমেরিকার বাজারে পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে চীন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর নতুন শুল্কনীতি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ট্রাম্প। যদিও কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত হোয়াইট হাউস থেকে মেলেনি। তবে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর পরই বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে হাল ফিরতে শুরু করেছে। আমেরিকার শেয়ার বাজারের দু’টি সূচক ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’ এবং ‘ন্যাসড্যাক’ ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে চীনের সঙ্গে আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানির দিকে। দু’দেশের শুল্ক সংঘাতের আবহে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকেই চীনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল আমেরিকা। পরে বুধবার তা আরও ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। পাল্টা মার্কিন পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে চীন। তার পরে ট্রাম্প আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেন চীনা পণ্যের উপর। মোট শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০৪ শতাংশ। ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করতেই ফের ‘প্রত্যাঘাত’ করে চীন। পাল্টা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপায় বেইজিং। পরিস্থিতি দাঁড়ায়, আমেরিকার বাজারে চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক বনাম চীনা বাজারে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক! দুই দেশের মধ্যে এই শুল্ক সংঘাতের আবহেই গতকাল রাতে (বাংলাদেশসময় অনুসারে) চীন ছাড়া বাকি সব দেশের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখলেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসান্ট নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, কানাডা এবং মেঙিকোও এই ছাড়ের আওতায় আছে। এই দুটি দেশ তাদের কিছু পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্কের মুখে ছিল। এখন শুল্ক প্রাথমিক সেই ১০ শতাংশেই থাকবে।