চীন-জাপানের অর্থায়নে প্রতিটি প্রকল্পেই বাড়বে সরকারি ব্যয়

শুধু আউটার রিং রোড প্রকল্পে বাড়তি লাগবে ৫৭ কোটি টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২০ at ৩:৫৪ পূর্বাহ্ণ

চীন ও জাপানের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি টাকা শক্তিশালী হয়ে উঠার ঘটনায় বিপাকে পড়ছে সরকার। চীন ও জাপানের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রতিটি প্রকল্পেই শত শত কোটি টাকার বাড়তি অর্থের যোগান দিতে হচ্ছে সরকারকে। চট্টগ্রামের আউটার রিং রোড প্রকল্পেই দিতে হচ্ছে ৫৭ কোটি টাকা। কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পসহ নানা প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা বাড়তি যোগান দিতে হচ্ছে। শুধু চট্টগ্রামে নয়, পদ্মা সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগি দেশ জাপান। বহুবছর ধরে জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। জাপানের অর্থায়নে এদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। দেশের বড় বড় প্রকল্পে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা অর্থায়ন করে আসছে। জাপানের পাশাপাশি চীনও বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। সরকারের পূর্বমুখী নীতির কারণে চীনই বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগি। চীনের সহায়তায় দেশের নানা প্রান্তে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
চীন ও জাপান বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোতে ঋণ কিংবা সহায়তা হিসেবে নিজেদের মুদ্রায় অর্থায়ন করে। একইভাবে তারা যে পরিমাণ ইয়েন কিংবা ইউয়ান প্রদানের চুক্তি করে সেই অর্থই প্রদান করে। প্রকল্প ব্যয় বাড়লে বা অন্য কোন কারণে খরচ বাড়লে তাদের ভাগের বাড়তি অর্থ আর তারা প্রদান করে না। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। এই প্রক্রিয়াটিই বাংলাদেশ সরকারকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, চীন ও জাপানের মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা গত বেশ কিছুদিন ধরে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রা শক্তিশালী অবস্থানে থাকায় আগে প্রতি ইয়েনের বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যেতো এখন তার থেকে কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে। চীন ও জাপানের দেয়া মুদ্রার বিনিময় হিসেবে প্রদত্ত টাকার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বিনিময় হিসেবে প্রাপ্ত কম টাকার বাাকিটা বাংলাদেশ সরকারকেই যোগান দিতে হচ্ছে।
গতকালের দরে জাপানের ১০০ ইয়েনের বিপরীতে ৮০.৬১ টাকা পাওয়া গেছে। ইয়েনের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় এই দর পাওয়া যাচ্ছে। করোনাকালের আগে এই অংক ৮১ টাকারও বেশি ছিল। এছাড়া গতকাল চীনের ১০০ ইউয়ানের বিপরীতে ১২৬২.০৭ টাকা পাওয়া গেছে। আগে এই অংক প্রায় ১২৭৫ টাকার কাছাকাছি ছিল। ফলে জাইকা কিংবা চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোতে দেয়া অর্থের বিনিময়ে যে পরিমাণ টাকা পাওয়া যেতো, এখন তার থেকে শত শত কোটি টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। আর এই অংশটি পূরণ করতে বাংলাদেশ সরকারকে কোটি কোটি টাকা বাড়তি যোগান দিতে হচ্ছে।
এবিষয়ে গতকাল সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও আউটার রিং রোড প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস বলেন, জাইকা যেই পরিমাণ সহায়তা করেছে বর্তমানে তার থেকে ৫৭ কোটি টাকা আমরা কম পাচ্ছি। এই টাকার যোগান সরকারি তহবিল থেকে দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেন, টাকা শক্তিশালী হচ্ছে এটি অবশ্যই ভালো খবর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি খরচের মুখে পড়লেও আমাদের অর্থনীতির জন্য বিষয়টি সুখকর। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। এটা না করলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো না। আমাদের টাকার মান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে উল্লেখ করে খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ভারত পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের অগ্রগতি অনেক ভালো। ২০০৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের এক রূপীর জন্য আমাদের এক টাকা দশ পয়সা খরচ করতে হতো। আর এখন আমাদের মাত্র ৬০ পয়সা দিয়ে তাদের এক রূপী পাচ্ছি। তাদের চেয়ে আমাদের টাকা অনেক শক্তিশালী। আমাদের অগ্রগতি ভারতের চেয়েও বেশি। টাকা শক্তিশালী হয়ে উঠায় আমাদের কিছু কিছু বাড়তি ফান্ডিং করতে হলেও বিষয়টি শক্তিশালী অর্থনীতির পরিচায়ক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নতুন শনাক্ত ৭৪
পরবর্তী নিবন্ধরবি এখন ৫ কোটি গ্রাহকের অপারেটর