অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে আসামি করাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। গতকাল জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে ১১টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে– হত্যাকাণ্ডে জড়িত যে সকল ইসকনের সন্ত্রাসী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি তাদেরকে গ্রেফতারপূর্বক দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। মসজিদ, ল চেম্বার, গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে হত্যা মামলাসহ অন্যান্য মামলাসমূহে অন্যতম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত মামলাসমূহের চার্জশিট প্রদানপূর্বক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঘটনার দিন আদালত এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যান্য দাবি তুলে ধরে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকারীদের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা না করার জন্য অনুরাধ জানাচ্ছি। নির্মম ও পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে সকল প্রকার অপপ্রচার ও চক্রান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য দেশি বিদেশি সকল মহলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আলিফের পরিবারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। নিরাপরাধ কোনো ব্যক্তিকে হয়রানি না করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আদালত অঙ্গনের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। আদালত অঙ্গনের সুদীর্ঘকালের সৌহার্দপূর্ণ সমপ্রীতি বজায় রাখা ও সহঅবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বলে আসছি ঐ দিনের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার সময় আদালত এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় সন্ত্রাসীরা নির্মম হত্যাকাণ্ড, মসজিদ, আদালত, ল‘ চেম্বার, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের গাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর করার সুযোগ পেয়েছিল। আদালত অঙ্গনে দীর্ঘসময় চিন্ময় দাশকে প্রিজন ভ্যানে রাখা হয় এবং তিনি প্রিজন ভ্যান থেকে হ্যান্ড মাইক দিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে তার অনুসারীদের ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার নির্দেশ দেন। যার ফলশ্রুতিতে আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংগঠিত হয়। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন কর্তৃক কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জকে বদলি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা তো বলিনি বাইরে থেকে আইনজীবী এনে ডিফেন্স করতে পারবে না। আমাদের বারের কেউ যাতে আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে না দাঁড়ায় সেটা বলছি। আমাদের আইনজীবীদের আমরা না দাঁড়াতে অনুরোধ করছি। অন্য বারের কোনো আইনজীবী দাঁড়ালে আমাদের সমস্যা নেই। তিনি বলেন, কোনো আইনজীবী না থাকলে আদালতই একজন আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে। এটাকে স্টেট ডিফেন্স বলে। যিনি মারা গেছেন তিনি আমাদের সমিতির সদস্য, তাই আমরা মনে করি তার রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আসামিপক্ষে দাঁড়িয়ে আমাদের কেউ আসামি নির্দোষ এটা যেন না বলে সেই অনুরোধ করেছি। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো আইনজীবীকে নাজেহাল করা হয়েছে, আদালতে যেতে দেওয়া হয়নি কিংবা হামলা করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। এসবের কোন ভিত্তি নেই।