খুচরা পর্যায়ে দুই দফা চিনির দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে তদারকির অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। সর্বশেষ বাণিজ্যমন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি খোলা চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির মণ (৩৭.২৩৭ কেজি) বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা মাঝখানে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় প্রতি মণ চিনি ৪ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গত ক’দিনে মণে ১০০ টাকা কমেছে। ভোক্তারা বলছেন, সরকার প্রথমবার খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১০৪ টাকা। তখন বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০–১২৫ টাকায়। এখন ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে কিন্তু বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকায়। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ২০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সরকার কেবল মূল্য নির্ধারণ করে দায় সারছে। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের কোনো তদারকি নেই। সরকার চাইলে ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করে দেয়া দামে চিনি বিক্রি করতে বাধ্য। কারণ আমাদের দেশে গুটি কয়েক শিল্পগ্রুপ চিনি আমদানি করে পরিশোধন ও বিপণনের সাথে জড়িত। তাদের কাছ থেকে আমদানি তথ্য নিয়ে কড়া নজরদারি করলে চিনির দাম বাড়ার কথা না। গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা। এছাড়া কাজীর দেউড়ির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। কাজীর দেউড়ির হক ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, চিনি বর্তমানে প্রতি কেজি ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছে। পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজি চিনিতে আমাদের ১৩০ টাকার মতো খরচ পড়ছে। তাই ১২০ টাকায় চিনি বিক্রি করলে আমাদের কেজিতে ১০ টাকা লোকসান দিতে হবে। আসলে নজরদারিটা চিনির আড়তে করা হলে আমরা কম দামে চিনি কিনতে পারবো। তখন কম দামে বিক্রিও করতে পারবো।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে এ সপ্তাহে চিনির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে দাম উল্টো মণে ১০০ টাকা কমেছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজির ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি থাকার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশে গুটিকয়েক চিনি আমদানিকারক আছেন। তারা নির্দিষ্ট কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে চিনি বিক্রি করেন। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তবে অবশ্যই চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এখন চিনির বাজার কে তদারকি করবে, এটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।