চিঠিকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে অনেক গান, কবিতা ও সাহিত্য। ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’– আবেগ মিশ্রিত এরকম গান লিখেছেন অনেকে। এছাড়া চিঠির আদলে রচিত হয়েছে প্রখ্যাত কবি লেখকদের বহু লেখনী। এসব চিঠির আবেগ মিশ্রিত সেসব বার্তা পাঠানো হতো ডাকে। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতিতে পৃথিবী এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। ভাবনার সাথে সাথেই দ্রুত গতিতে পাঠানো যায় যেকোনো বার্তা, ফোনকল কিংবা ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে প্রিয়জনের মুখ। যোগাযোগ করতে আর দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় না। সরকারি–বেসরকারিসহ সব ধরনের কাজেও এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট, ইমেইল, স্মার্টফোন। ডাকযোগের জন্য অপেক্ষা করা লাগে না। অথচ এক যুগ আগেও যোগাযোগের জন্য ডাক মাধ্যম ছিল খুবই জনপ্রিয়। ছেলে চিঠি লিখত মাকে, স্বামী স্ত্রীকে, প্রবাসী নিজের পরিবারকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে চিঠি লিখে ডাকযোগে পাঠাতো। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ মুহূর্তেই বার্তা পাঠাতে পারছে। তাই এখন কেউ আর চিঠি লেখে না। কাউকে এখন গভীর উৎকণ্ঠায় ডাকপিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে অতীত হয়ে গেছে গেছে চিঠির যুগ। তবে শুধু চিঠির আদান–প্রদান কমলেও আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে ডাকযোগের। ডাক কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিঠি পরিবহন ছাড়াও আরো কিছু কাজ করে থাকে। ডাক, টেলিগ্রাফ এবং টেলিফোন (পিটিটি), আন্তর্জতিক ডাক পরিষেবা ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করে। কিছু দেশে ডাক কর্তৃপক্ষকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট পরিচালনার অনুমতি দেয় এবং পাসপোর্টের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তত্বাবধান করে।
আজ বিশ্ব ডাক দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৯ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। একটা সময় একটি চিঠি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হলে যতগুলো দেশের ভেতর দিয়ে যেত, সেসব দেশের ডাকটিকিট খামে লাগাতে হতো। এতে করে ডাক বিভাগকে পোহাতে হতো অনেক ঝামেলা। ১৯৬৯ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৬তম অধিবেশনে ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৮৪ সালে জার্মানির হামবুর্গে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ডাক সংস্থার ১৯তম অধিবেশনে বিশ্ব ডাক ইউনিয়ন দিবসকে করা হয় বিশ্ব ডাক দিবস। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল ইউনিয়ন অর্থাৎ বিশ্ব ডাক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। এরপর থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রতি বছর ৯ অক্টোবরকে বিশ্ব ডাক দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
ডাক বিভাগে সরকারের সুদৃষ্টি আশা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক অফিসের পোস্টমাস্টার রকি দাশ। তিনি আজাদীকে বলেন, ডাক বিভাগের দিকে সরকার আরেকটু সুদৃষ্টি দিলে এটি আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ডাক সেবা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। মানুষ মনে করে ডাক মানেই চিঠি আদানপ্রদান করা হয়। ডাকে শুধু চিঠি ছাড়াও অনেক সুযোগসুবিধা রয়েছে। তিনি বলেন, এখনো মানুষের ডাকের প্রতি বিশ্বাস রয়েছে। মানুষ টাকা হাতে থাকলে ডাকে জমা রাখে। তবে কর্তৃপক্ষ যদি সব অফিসে ডাকের সকল সুবিধা চালু করেন সেক্ষেত্রে আরও ভালো হবে।