চিটাগাং কো-অপারেটিভ হাউজিংয়ের সাবেক সভাপতি আ জ ম নাছিরসহ সাবেক ২৮ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব

কাল অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশনা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২২ মার্চ, ২০২৫ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

দি চিটাগাং কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’এর সাবেক সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহাজাহান ও কোষাধ্যক্ষ মো. সাজ্জাদসহ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের পরিত্যক্ত সরকারি জমি আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে ওই কর্মকর্তাদের তলব করেছে দুদক। আগামীকাল রোববার দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার দপ্তরে উপস্থিত হয়ে তাদের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৮ মার্চ ‘দি চিটাগাং কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’এর বর্তমান সম্পাদককে একই বিষয়ে চিঠি দেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক সাঈদ মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। এতে অভিযোগ থাকা সাবেক ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত নোটিশ জারিপূর্বক সার্ভিস রিটার্ন প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ‘দি চিটাগাং কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন আজাদীকে বলেন, ওই চিঠিগুলো সার্ভ করা হয়েছে।

কী তদন্ত করছে দুদক : দুদুকের ইস্যুকৃত নোটিশে মোহাম্মদ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের পরিত্যক্ত সরকারি জমি আত্মসাৎ, জালজালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারি, মিথ্যা তথ্য ও রেকর্ড সৃজন হিসাব খোলা, সমবায় অফিস ও ব্যাংকের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানের হিসাব হতে নিজেরাই টাকা উত্তোলন করে নামেবেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

একই নোটিশে ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক ২৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট চারটি অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছেসোসাইটির খুলশী প্রকল্পের ৪নং সড়কের ১০৪/সি প্লটের পার্শ্ববর্তী ৭ দশমিক ১৮ কাঠা জায়গা বিধিবহির্ভূতভাবে বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রেশন প্রদান। জাল পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সৃজন করে জনৈক মায়া রানীর ১৭ শতক জমি আত্মসাৎ। জালজালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং মোহাম্মদ সাজ্জাদের ব্যক্তিগত মামলার খরচ বাবদ ব্যয়িত সাড়ে ৯ লাখ টাকা সোসাইটির তহবিল হতে প্রদান।

এর মধ্যে জালজালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনার বিষয়ে ইতোপূর্বে গঠিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে সোসাইটির সদস্য মোহাম্মদ সাজ্জাদ কর্তৃক জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করা হয়।

এ ছাড়া জেলা সমবায় অফিসের একটি অডিট প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মো. সাজ্জাদের ব্যক্তিগত মামলার খরচ বাবদ ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমিতির তহবিল হতে প্রদান করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ (মামলা নং১১৬৯০/২০২১) অমান্য করে ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুষ্ঠানপূর্বক ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর আইনজীবীর অনুকূলে উক্ত টাকার টাকার চেক ইস্যু করে এবং একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর এ টাকা সমিতির ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়।

এছাড়া শেয়ার ট্রান্সফারের অভিযোগের বিষয়ে ইতোপূর্বে গঠিত একটি তদন্ত কমিটিও এর প্রমাণ পেয়েছে। সোসাইটির সদস্য মোহাম্মদ সাজ্জাদ কর্তৃক জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ার আত্মসাতের ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোসাইটির সদস্য চেমন আরা বেগমের ৫টি শেয়ার (শেয়ার নং ৩৯৪৫ হতে ৩৯৪৯) মোহাম্মদ সাজ্জাদের নিকট যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে চেমন আরা বেগমের স্বামী মৃত মোহাম্মদ রাশেদ (সদস্য নং ১৫০২) এর ৫টি শেয়ার (৯০৪ হতে ৯০৮) প্রথমে মৃত মোহাম্মদ রাশেদের ভুয়া মৃত্যু সনদপত্রসহ সোসাইটিতে শেয়ার স্থলাভিষিক্তকরণের আবেদন দাখিল করে চেমন আরা বেগমের নামে স্থলাভিষিক্তকরণ করা হয়। পরে একই কৌশলে শেয়ার হস্তান্তরের আবেদন দাখিল করে মোহাম্মদ সাজ্জাদের অনুকূলে ৫টি শেয়ার (৯০৪ হতে ৯০৮) জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ :

আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জাল পাওয়ার অব এটর্নি দলিল সৃজন করে জনৈক মায়া রানীর ১৭ শতক জমি আত্মসাৎ ও জালজালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ করা হয়। এর মধ্যে মায়া রানীর জমি ক্রয়ের অনুমোদন সংক্রান্ত বোর্ড মিটিংয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এ ঘটনা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুসারে একটি অপরাধ।

এ ছাড়া সোসাইটির সদস্য মরহুম মোহাম্মদ রাশেদের (সদস্য নং১৫০২) শেয়ার হস্তান্তর অনুমোদন সম্পর্কিত বোর্ড মিটিংয়েও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আ জ ম নাছির।

২৮ কর্মকর্তা কারা :

সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে’ বক্তব্য প্রদানের জন্য দুদক ‘দি চিটাগাং কোঅপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’এর ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক ২৮ কর্মকর্তাকে বক্তব্য প্রদানের জন্য আগামীকাল উপস্থিত থাকতে বলেছে। তারা হলেনসিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মো, আবুল কালাম, মোহাম্মদ ইদ্রিস, ইঞ্জি মো. কপিল উদ্দিন ইউসুফ, কে বি এম শাহাজাহান, ডা. মো. আবুল কালাম, মিসেস সিভারা হোসেন, মো. হাবিব উল্লাহ, এ এস এম সোহাইল, আ জ ম নাছির উদ্দিন, মোফাখারুল ইসলাম খসরু, মোহাম্মদ আলমগীর পারভেজ, আলাউদ্দীন আলম, মো. শাহ আলম বাবুল, মো. নুরুল ইসলাম মিন্টু, মো. রাশেদুল আমিন, মো. নুরুল ইসলাম শাহীন, মো. শফিকুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ, মোহাম্মদ সাজ্জাদ, আবদুল মান্নান, সৈয়দ রফিকুল আনোয়ার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. আকবর হোসেন ও ডা. তৈয়ব শিকদার। এছাড়া সাবেক এক সভাপতিও রয়েছেন এ তালিকায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরস্পর সহানুভূতি ও মমত্ববোধই সিয়াম সাধনার দর্শন
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে গণপিটুনিতে গরু চোরের মৃত্যু