পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহকৃত চালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নতুন নীতিমালা কার্যকর হতে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশিত পরিপত্র জারি করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত পরিপত্র অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে রাইস মিল থেকে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহকৃত চালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গতকাল চট্টগ্রামের সকল চাল ব্যবসায়ী, চালকল মালিক সমিতির সদস্যসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মিটিং করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক।
মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থেকে প্রতিটি রাইস মিল মালিককে তাদের মিলে উৎপাদিত চালের বস্তায় গায়ে ‘ধানের জাত, প্রস্তুতকারক (কোন মিলে বস্তাজাতকরণ করা হয়েছে), ওজন, মিল গেটে চালের দাম, উৎপাদন তারিখ ও ঠিকানা’ মুদ্রিত আকারে লাগিয়ে দিতে হবে। যে সব কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান চাল বাজারজাত করে তাদের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলা পরিদর্শনকালে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক ভাবে বেড়ে গেলে মিলার, পাইকারী বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তাগণ আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই অবস্থার উত্তরণের জন্য চালের বাজার মূল্য সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত এবং মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে চাল উৎপানদনকারী মিলারগণ গুদাম থেকে বাণিজ্যিক ভাবে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার উপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেট মূল্য ধান ও চালের জাতের নাম উল্লেখ করতে হবে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এই পরিপত্র জারি করেন। পরিপত্রের নতুন এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দেশের সকল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদশকগণকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারে গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ অফিসের সকল কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের চাক্তাই–খাতুনগঞ্জসহ চট্টগ্রামের সকল চাল ব্যবসায়ী, চট্টগ্রামের সকল চালকল মালিক সমিতির সদস্য ও পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে মিটিং করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থেকে মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্র অনুযায়ী রাইস মিল থেকে পাইকারী ও খুচরা পর্যায়ে সরবরাহকৃত চালের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ মূল্য বিষয়ে অবহিত করা হয়।
বৈঠকে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ব্যাপারে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ আজাদীকে বলেন, সরকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমাদের মিল মালিক এবং চাল ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডিসি সাহেব মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে বলা হয়েছে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে প্রতিটি চালের বস্তায় মিল মালিকদের ‘ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক (কোন মিল থেকে বস্তাজাতকরণ করা হয়েছে), নিট ওজন, মিল গেট মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, ঠিকানা (উপজেলা ও জেলা)’ প্রিন্ট করে বস্ত্রার গায়ে লাগিয়ে দিতে হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত আমাদেরকে তো মানতে হবে। তবে এটার করার ফলে একটি সমস্যাও হবে। বিষয়টি আমরা ডিসি সাহেবকে মিটিংয়ে বলেছি। যেমন–দিনাজপুর, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২৫ কেজি একটি চলের বস্তা চট্টগ্রামে আসলে সেটার গায়ে দাম লেখা থাকবে ১৭০০ টাকা। দিনাজপুর, রাজশাহী থেকে এই চালের বস্তা চট্টগ্রাম আসতে খরচ পড়েবে ১০০ টাকা, টেকনাফে যেতে আরো ১০০ টাকা খরচ পড়বে। তখন ১৭০০ টাকার ২৫ কেজি চালে বস্তাটি চট্টগ্রামে বিক্রি দোকানদারকে বিক্রি করতে হবে ১৮০০ টাকা এবং টেকনাফের ব্যবসায়ীকে বিক্রি করতে হবে সাড়ে ১৮শ’ বা ১৯০০ টাকায়। তখন ক্রেতা বস্তার গায়ে লেখা থাকা ১৭০০ টাকার চাল ১৮শ’ বা ১৯শ’ টাকা কেন বিক্রি করা হচ্ছে তা জানতে চাইবে।
তিনি আরও বলেন, এটি করার হয়তো একটি উদ্দেশ্য আছে–সেটি হচ্ছে কেউ যাতে মজুদধারী করতে না পারে। যেহেতু বস্তার গায়ে উৎপাদনের তারিখ থাকবে। মিনিকেট নামে কোন চাল বাজারজাত করা যাবে না বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। কারণ মিনিকেট নামে ধানের কোন জাত নেই। বিআর–২৮ নামের ধানকে ভালো ভাবে ছাটাই করে মিনিকেট নামে বিক্রি করা হয়। হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করতে যাচ্ছে সরকার।