বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধরনভেদে প্রতি কেজি চালের দাম দুই থেকে আট টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের পাশাপাশি বেড়েছে সোনালি মুরগি আর আলুর দামও। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনস্থলে বোরো ধানের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরু তথা মিনিকেট চালের দাম এখন বাড়তি। সরু চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে মোটা ও মাঝারি চালের দামও বাড়ছে। চালের দাম বৃদ্ধিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন বাজার করতে আসা মানুষেরা।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকাম ও আড়তগুলোতে চালের দাম বেড়েছে। চালকল মালিকরা ঈদের পর চালের দাম বাড়িয়েছেন। সামনে হয়ত আরও বাড়তে পারে।
ক্রেতারা বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম থাকলেও চালের দাম স্থির নয়। সবজির দাম বাড়লে না নিলেও চলে, কিন্তু চাল তো প্রতিদিনের প্রধান খাদ্য। দাম বাড়লেও চাল কিনতেই হয়। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব। কম আয়ের মানুষের জন্য এই বাড়তি চাপ মেটানো দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তারা সাধারণত মিনিকেট চাল বেশি খান। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে ডায়মন্ড, মঞ্জুর, সাগর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও এসব চালের কেজি ছিল ৭৫–৭৬ টাকা। এ ছাড়া মোজাম্মেল মিনিকেট চালের দাম কেজিতে প্রায় ছয় থেকে আট টাকা বেড়েছে। তাতে প্রতি কেজি মোজাম্মেল চাল বিক্রি হয় ৮৮–৯০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় অনেক বিক্রেতা এখন দোকানে মোজাম্মেল চাল রাখছেন না বলে জানান।
নিম্ন ও নিম্ন মাঝারি আয়ের মানুষেরা সাধারণত মোটা ও মাঝারি চাল বেশি খান। এসব চালের কেজি সাধারণত ৫০–৫৫ টাকার আশপাশে থাকে। সমপ্রতি এসব চালের দামও বেড়েছে। মোটা হিসেবে পরিচিত স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ৫৭–৫৮ টাকায় উঠেছে। আর ব্রি–২৮ ও ব্রি–২৯ জাতের মাঝারি চালের দামও কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০–৬২ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাস দেড়েক হলো বাজারে নতুন মৌসুমের বোরো ধান এসেছে। এই ধান থেকে তৈরি চাল গত মাসের শুরুতেই বাজারে আসে। তাতে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মিনিকেটের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা কমেছিল। অনেকটা সেই দামেই এ চাল বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বোরো ধানের দাম আবার বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে মিনিকেট চালের দামও বাড়িয়ে দেন চালক মালিকেরা।
বাজারে চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার পেছনে পাহাড়তলী বাজারের ব্যবসায়ীরা মিল পর্যায়ে দাম বৃদ্ধিকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলেও মিল মালিকরা বলছেন, এখন চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে ধানের দাম বেড়ে যাওয়াটাই মূল কারণ।
পাহাড়তলী বাজারে চালের আড়তে মিনিকেট চাল সরবরাহ করেন এমন এক প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘বাজারে এখন ধানের সরবরাহ কম। তাই ধানের দাম বেড়েছে। আগে যেখানে আমরা প্রতি মণ ধান কিনতাম ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা দিয়ে, সেখানে এখন মণপ্রতি ধানের দাম পড়ছে ১৬০০ টাকা। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে। ’
আরেক মিল মালিক বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় এখন বাজারে ধানের আমদানি কমেছে, তাই মিলে চাল উৎপাদন কম হচ্ছে। হাটে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধানের দামও বাড়ছে। তাই চালের দাম এখন বাড়ছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় সরকারের মজুত নীতিমালার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু মজুতদাররা। এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট ব্যবসায়ীরা হাট–বাজারে আসা অর্ধেকের বেশি ধান কিনে মজুত করে রেখেছেন। কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে একেবারে নেই বললেই চলে। তাই হাট–বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া দামে ধান কিনে চাল করতে গিয়ে মিলারদের খরচ বেড়েছে। যার প্রভাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে ২–৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, একদিকে আয়ের চাপ, অন্যদিকে প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে তাদের নাভিশ্বাস উঠছে। তাঁরা বলেন, চালের বাজার ফের অস্থির করার পাঁয়তারা চলছে। হঠাৎ করে এভাবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট আরও বাড়বে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।