চালের বাজার যেকোনো মূল্যে স্থিতিশীল রাখতে হবে

| শুক্রবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

চালের দাম বেড়েই চলেছে। যদিও আমরা জানি, সরবরাহে কোনো সংকট নেই। তারপরও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষ কথায় কথায় একটা কথা বলে। সেটি হলো কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি হয় না। চালের দাম বাড়ারও কোনো না কোনো কারণ আছে। সেটা কী? সিন্ডিকেট। মিল পর্যায়ে সিন্ডিকেশনেরও অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৭ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘চালের দাম বাড়ছে কেন’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষকের ঘরে মাত্র আমন ধান উঠেছে। তারপরও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে চালের দাম। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সমপ্রতি অভিযান পরিচালনা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অভিযানের পরও নিয়ন্ত্রণে নেই বাজার। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে পাইকারিতে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা বেড়েছে। চালের এমন অব্যাহত দর বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে।

চালের আড়তদাররা বলছেন, এই সময়ে চালের দাম বাড়ার কথা নয়। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের মোকাম মালিকরা ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে চালের দাম বৃদ্ধি করছেন। এছাড়া অনেক শিল্পগ্রুপ ধানচাল মজুদ করে বাহারি মোড়কে বাজারকাত করছেন। এটি বাজার বাড়ার অন্যতম কারণ।

চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সমপ্রতি একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। কেননা, গরিব মানুষের মোট আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাবে। এ কথা সত্যি, দারিদ্র্যসীমার বিষয়টি কোনো সময়েই স্থিতিশীল নয়। নানা কারণে এ সীমার হ্রাসবৃদ্ধি হয়। যেখানে চাল দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রধান উপাদান, সেখানে এর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যা আশঙ্কাজনক।

১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ। আর মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন খাদ্য। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাধীনতাউত্তর ৪৭ বছরে যে হারে মানুষ বেড়েছে, সে হারে খাদ্য উৎপাদনও বেড়েছে। তা না হলে ১৬ কোটি মানুষের মুখের আহার যোগান দেওয়া সম্ভব হতো না। এর পরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনঅতিবৃষ্টি, আগাম বন্যার কারণে ফলন বিপর্যয় হলে খাদ্য ঘাটতি হয়ে থাকে। আর খাদ্য ঘাটতি হলে বিদেশ থেকে সরকারিবেসরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি করে তা সামাল দেওয়া হয়।

গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধানচাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

আমরাও মনে করি, চালের বাজারদর যে কোনো মূল্যেই স্থিতিশীল রাখতে হবে। কারণ দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। চালের বাজার বৃদ্ধি হলে সাধারণ ভোক্তার কষ্ট বাড়ে। এও যেমন সত্য, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, সক্ষমতাও বেড়েছে, আবার রুচিবোধেরও পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এখন মানসম্মত চকচকে মরাদানা, ভাঙাদানামুক্ত চিকন চালের চাহিদা বেড়েছে। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে চিকন চালের কদর এখন অনেক বেশি। যেমনমিনিকেট, কাটারি, নাজিরশাইলজাতীয় চালের চাহিদা বেশি। কিন্তু চিকন চাল প্রস্তুত করতে হলে চিকন ধানের প্রয়োজন হয়।

যে কোনো পণ্যের সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে, এটাই স্বাভাবিক। পরিবহন সংকটে চাল সরবরাহ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে চালের বাজারমূল্য কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য এ জন্য অনেকেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অতি মুনাফালোভীদের দায়ী করছেন। আবার সরকারের পক্ষেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে। অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে সাধারণ ভোক্তার গলাকাটার অভিযোগকে যেমন উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, তেমনি মূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে প্রতিকারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে ভোক্তার কষ্টও লাঘব হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে