চালের বাজার : কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা রুখতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চালের দাম বেড়ে চলেছে। যদিও আমরা জানি, সরবরাহে কোনো সংকট নেই। তারপরও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষ কথায় কথায় একটা কথা বলে। সেটি হলো কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি হয় না। চালের দাম বাড়ারও কোনো না কোনো কারণ আছে। সেটা কী? সিন্ডিকেট। মিল পর্যায়ে সিন্ডিকেশনেরও অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, স্বল্প আয়ের মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার চাল সহায়তা দিচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমবারের মতো ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রমেও চাল যুক্ত হয়েছে। এর পরও চালের বাজার ফুঁসে ওঠার কারণ কী। কারণ হিসেবে চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে আমন মৌসুমের শেষ দিকে ধান সরবরাহ কম থাকার বিষয়টিও বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চাল বিতরণ হয়েছে। বোরো, আমন ও আউশতিন মৌসুমে দেশে চাল উৎপাদন হয়। এখন আমন মৌসুম চলছে। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে কৃষকরা পুরোদমে ধান কাটতে শুরু করবেন। বাজারে আগামী মাসের শেষ নাগাদ নতুন চাল আসবে। বর্তমানে কম সরবরাহের অজুহাতে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরকারি বিতরণ বাড়ায় চাল বিক্রি কমে গেছে। পাশাপাশি ধান কম থাকার অজুহাত দিয়ে মিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যবসায়ীদের কারো কারো বক্তব্য হলো, ধানের বড় অংশই কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে ফড়িয়া ও মিলাররা। তাদের চাল বাজারে ছাড়ার কথা। তারা তা না করে গুদামে আটকে রেখেছে। মিলারদের কাছ থেকে চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ বাজারে আসছে না। এ কারণে চালের সংকট ও দাম দুইই বেড়েছে বা বাড়ছে। খুচরা, পাইকারি ও মিলারদের একে অপরকে দোষারোপ করার একটা প্রবণতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছে, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে তারা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, মিলাররা চাল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, দামও বাড়িয়েছে। ফলে তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। মিলারদের বক্তব্য, গ্রামে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানি ধান কিনে আটকে রেখেছে। ধান সংকটের কারণে ধান ও চালের দাম বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এভাবে পরস্পর দোষারোপের ব্যাপারটি বহু পুরনো। চালের দাম যখন বাড়ে তখন সংশ্লিষ্ট কেউই দায় নিতে রাজি হয় না। একে অপরকে দায়ী করে গা বাঁচানোর চেষ্টা করে। মাঝখান থেকে ক্রেতাভোক্তার পকেট কাটা যায়। তাদের সুবিধাঅসুবিধা দেখার কেউ নেই। চাল বা খাদ্যশস্যের বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে যা বুঝায়, তারও কোনো বালাই নেই। চালের দাম বাড়লে, কেন বাড়ছে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোঁজখবর করে না। কোথাও কোনো বিভ্রাট, সংকট বা ঘোঁট থাকলে তার মীমাংসার চেষ্টা করে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বাজারে সরবরাহ সংকট ও সিন্ডিকেশনের কারণে চালের দাম বাড়ছে। সরবরাহ সংকট দেখা দিলে তখন সিন্ডিকেশনও কাজ করে। এছাড়া প্রায় প্রতি বছরই চাল আমদানি করে সরকার। গত অর্থবছরেও প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়। তবে এ বছর চাল আমদানি না করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। এটিও চালের অযৌক্তিক দাম বাড়ার কারণ কিনা তা যাচাই করে দেখতে হবে। এজন্য মিলগুলোয় চালের মজুদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন।’

খাদ্যমন্ত্রী অসংখ্যবার হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, যারা অবৈধ মজুত করে চালের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মিলাররা ধান ৩০ দিন ও চাল ১৫ দিনের বেশি মজুত করে রাখতে পাারবে না। যারা অবৈধভাবে মজুত করে রাখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের তরফে যেভাবেই বলা হোক না কেন, দেশে খাদ্যশস্যের কোনো সঙ্কট নেই, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কথা ন্যায়সঙ্গত মূল্য নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট হতে পারে না বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। এ কথা সত্যি যে, দেশে ধানচালের অভাব নেই। প্রয়োজনে আমদানির ব্যবস্থাও আছে এবং আমদানিও হয়ে থাকে। কিনতু তবু কেন চালের দাম বাড়ে, সেটা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দেশকে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত কিনাসেটা দেখতে হবে। এর পেছনে কোনো কারসাজি থাকলে তা ভেঙে দিতে হবে এবং দায়ীপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে