সরকার ডিম ও তেলের পর এবার চাল আমদানিতে শুল্ক কমালো। রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এনবিআর জানিয়েছে, বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চাল আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান তিন ধরনের শুল্ক কমানো হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ থেকে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এনবিআর বলছে, চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক–কর কমানোর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। পাশাপাশি বাজারে চালের সরবরাহ বাড়বে এবং দেশের আপামর মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে বলে মনে করে এনবিআর।
শুল্ক–কর কমানোর এ সুবিধা পেতে হলে চাল আমদানির আগে প্রতি চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে।
এর আগে বাজারে ডিমের দাম বাড়তে শুরু করলে ডিম আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। পাশাপাশি ডিমের আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। ডিমের ক্ষেত্রে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা দিয়েছে সরকার। তবে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া তেলের দাম সহনীয় রাখতে সমপ্রতি পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেলের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পরিশোধিত ও অপরিশোধিত পাম তেলের আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তেলের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নিত্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ডিম ও তেলের পর এবার চালের দাম কমানোর লক্ষ্যে সরকার যে প্রয়াস চালাচ্ছে, সেটাকে আমরা অভিনন্দিত করছি। গবেষকরা বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। কেননা, গরিব মানুষের মোট আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাবে। এ কথা সত্যি, দারিদ্র্যসীমার বিষয়টি কোনো সময়েই স্থিতিশীল নয়। নানা কারণে এ সীমার হ্রাস–বৃদ্ধি হয়। যেখানে চাল দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রধান উপাদান, সেখানে এর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যা আশঙ্কাজনক।
১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। আর মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন খাদ্য। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাধীনতা–উত্তর ৪৭ বছরে যে হারে মানুষ বেড়েছে, সে হারে খাদ্য উৎপাদনও বেড়েছে। তা না হলে ১৭ কোটি মানুষের মুখের আহার যোগান দেওয়া সম্ভব হতো না। এর পরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন– অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যার কারণে ফলন বিপর্যয় হলে খাদ্য ঘাটতি হয়ে থাকে। আর খাদ্য ঘাটতি হলে বিদেশ থেকে সরকারি–বেসরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি করে তা সামাল দেওয়া হয়।
গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধান–চাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। চালের বাজার বৃদ্ধি হলে সাধারণ ভোক্তার কষ্ট বাড়ে। তাই আমরা মনে করি, চালের বাজারদর যে কোনো মূল্যেই স্থিতিশীল রাখতে হবে।